ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

দৃষ্টির সীমানা থেকে সুদূর যাত্রায় আলাউদ্দিন আলী

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
দৃষ্টির সীমানা থেকে সুদূর যাত্রায় আলাউদ্দিন আলী আলাউদ্দিন আলীর মরদেহের সামনে অশ্রুসিক্ত মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন। ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে সুদূরে যাত্রা করলেন সুরস্রষ্টা আলাউদ্দিন আলী। যে যাত্রায় মন ভিজেছিল ফেলে আসা দিনের স্মৃতিকাতরতায়।

যে কান্নায় ছিল প্রার্থনার অনুরণন। কারো অপেক্ষাকে দীর্ঘায়িত না করে ভীষণভাবে হৃদয়সিক্ততায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।

রোববার (০৯ আগস্ট) বিকেল পাঁচটা ৫০ মিনিটে মারা যান আলাউদ্দিন আলী। এরপর রাতভর তার মরদেহ ছিল বারডেম হাসপাতালে শীতল হিমঘরে। সেখান থেকে সোমবার (১০ আগস্ট) সকালে বের করা হয় তার মরদেহ। পরিবারের সদস্য অশ্রু, কর্মমুগ্ধদের শ্রদ্ধা নিয়ে বিকেলে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।

বিদায়যাত্রায় নিজের প্রিয় সব স্থান ঘুরেছেন আলাউদ্দিন আলী। হিমঘর থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় ক্ষণিকের জন্য ঢুঁ মারেন বনশ্রীর বাসায়। এরপরের যাত্রা ছিল খিলগাঁওয়ের আপন আলয়ে। দুই স্থানেই কেঁদেছিল স্বজন। কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা ছিল শুভানুধ্যায়ীদের।

বাদ যোহর খিলগাঁও তালতলা মোড়ে নুর-এ-বাগ জামে মসজিদে জানাজা শেষে তাকে নিয়ে আসা হয় এফডিসিতে। এখানে কর্মমুগ্ধদের শ্রদ্ধায় সিক্ত হন তিনি।

ফুলের অর্ঘ্য নিয়ে আসেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা, গীতিকবি সংঘ, সহকারী পরিচালক সমিতির কর্মকর্তারা।
ভালোবাসার পরশ নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গীত শিল্পী পার্থ বড়ুয়া, এস আই টুটুল, চিত্রনায়ক ওমর সানী, গীতিকবি কবির বকুল, জুলফিকার রাসেল, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মিউজিশিয়ান ফেডারেশনের সভাপতি গাজী আব্দুল হাকিম প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন আলাউদ্দিন আলীর ছেলে শওকত আলী রানা ও মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন।

এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে বাবার গানের সুর বিকৃত না করার অনুরোধ করলেন আলিফ আলাউদ্দিন। বললেন, ‘বাবার গান নতুনভাবে গান গাওয়ার বিরুদ্ধে আমি নই। কিন্তু তার গানের কিছু সিগনিফিকেন্ট কড রয়েছে। সেগুলো যেন পরিবর্তন করা না হয়, এটাই আমার চাওয়া। '

তিনি বলেন আমার বাবা পুরোটা জীবন সংগীতকে দিয়ে গেছেন। এর কিছুটা আমি পেয়েছি। সেটি নিয়েই থাকতে চাই।

সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার কাছে স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সংগীত গানের জগতে তিনি অপরিহার্য। বাংলা গানকে তিনি যা দিয়েছেন, যে আধুনিক সঙ্গীতায়োজন করেছেন, তার জন্য যতদিন বাংলা গান থাকবে ততদিন তিনি থাকবেন। তিনি জানা-শোনা একজন সংগীত পরিচালক ছিলেন। '

শেষ সময়ে আলাউদ্দিন আলীর সুরোপিত প্রায় সকল চলচ্চিত্রেই গান গেয়েছেন এস আই টুটুল। তিনি বলেন, 'তিনি ছিলেন খোলা মনের মানুষ। আমি বোধহয় সর্বকনিষ্ঠ শিল্পী। যে কিনা তার অনেক গান গেয়েছি। শেষের দিকে সব ছবিতেই তিনি এন্ডু কিশোর, মনির খান ও আমাকে দিয়ে গান করাতেন। মায়ার এ মানুষটি চলে গিয়ে আমাদেরকে এতিম করেছেন। তার গানের সুর সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করত। ফলে মানুষ সবসময় তাকে মনে রাখবে। '

চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (০৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে রাজধানী মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলাউদ্দিন আলী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
ডিএন/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।