এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা ও কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার তথা সন্তানদের আপত্তিতে এখন থেকে ব্যান্ডটির নাম ব্যবহার করে কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না এর অন্যান্য সদস্যরা।
কারণ, আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর এলআরবি নিয়ে জল অনেক ঘোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফাইরুয সাফরা আইয়ুব ও আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুব (আইয়ুব বাচ্চুর দুই সন্তান) জানিয়েছেন, এখন থেকে এলআরবি’র নামে কোনও কার্যক্রম বাংলাদেশ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। পাশাপাশি কপিরাইট আইনও বলছে, সন্তান ও পরিবারের মতকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
যে কারণে এখন থেকে সন্তানদের অনুমতি ছাড়া আর কেউ’ই এলআরবি নামে কোনও কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। কারণ, মৃত্যুর আগে ২৩টি অ্যালবাম ও ব্যান্ড নিজের নামে নিবন্ধন করে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু।
এ প্রসঙ্গে সাফরা ও তাযওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গানের শিল্পী ও মালিক হিসেবে হিসেবে আমার বাবা তার সৃষ্টিকর্মগুলো অনেক আগেই কপিরাইট করার জন্য উদ্যোগী হন। বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে তিনি তার গানের পুরো তালিকা কপিরাইট নিবন্ধিত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিলেন। আইনিভাবে এগিয়ে যাওয়া, শিল্পীদের অধিকার এবং মালিকানা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রতি বাবাই সর্বদা লড়াই করেছেন।
‘বাবার মৃত্যুর পর পরিবার পক্ষ থেকে তার লক্ষ্য পূরণ এবং অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নানা প্রতিকূলতার পরেও আমরা এখন বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া বাবার সৃষ্টিকর্মের মালিকানার অপব্যবহারের সুযোগ যাতে কেউ খুঁজে না পায়, এটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
‘বলে রাখি, এলআরবি নামে ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাবাই সম্পূর্ণ এককভাবে নেন। তাই তিনি এককভাবে তার রচিত, সুরারোপিত ও নিজ কণ্ঠে পরিবেশিত ২৭টি অ্যালবামের সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট করার পাশাপাশি ‘এলআরবি’ নাম-সংবলিত লোগো এবং ব্যান্ডটিও তার নামে নিবন্ধিত করেছিলেন। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও তার রচিত, সুরারোপিত ও স্বকণ্ঠে পরিবেশিত আরও অসংখ্য গান রয়েছে, যেগুলো কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীন। তাই বাবার মৃত্যুর পর সন্তান হিসেবে আমরাই তার বৈধ স্বত্বাধিকারী।
এদিকে ব্যান্ডটির কার্যক্রম বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদুল হাসান স্বপন বলেন, ‘বসের (আইয়ুব বাচ্চু) অসম্মান হয়, এমন উদ্যোগ আমরা নেবো না। পরিবারের সম্মান মানে বসের সম্মান। তাই তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম। ’
এলআরবি’র কার্যক্র বন্ধের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে ফাইরুয সাফরা আইয়ুব বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘আমরা দেখছি, বিভিন্ন ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ না করেই বাবার রচিত, সুরারোপিত গান নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করছেন। গানগুলোও কোনও স্ট্যান্ডার্ড বজায় না রেখে যেনতেনভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে গাইছেন; এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করছেন। যা বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য।
‘এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য বাবার সৃষ্টিকর্মের আইনি মালিকানার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়যুক্ত হওয়া। তাই এখন থেকে আমাদের সম্মতি ব্যতিরেকে এলআরবি নামের অপব্যবহার করে আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট নিবন্ধনকৃত গানগুলো পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। নইলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এলআরবি ও আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে ও মেয়ে বিদেশ থেকে আমাকে ইমেইল করেছেন। এতে তাদের বাবার গানগুলো সবখানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে বলে আমাকে জানান। সেগুলো বন্ধ করা বা রেভিনিউ চার্জ করার সুযোগ রয়েছে কিনা, তাও জানতে চান। আমি তখন দ্রুত চেক করে মুগ্ধ হয়েছি। লক্ষ্য করলাম, বাচ্চু ভাই তার বেশিরভাগ গান ও ব্যান্ড কপিরাইট করে গেছেন। যে কারণে গানগুলোর বাণিজ্যিক প্রচার বন্ধ করা বা রেভিনিউ সংগ্রহ করার বিষয়ে কোনও বাধা থাকলো না। সেই রেভিনিউ বাচ্চু ভাইয়ের ছেলেমেয়েই পাবেন এবং আইন অনুযায়ী গান ও ব্যান্ডের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। ’
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম দিকপাল, গিটার জাদুকর ও এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু।
১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল এলআরবি গড়ে তোলেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রথম ব্যান্ডটির নাম রাখা হয়েছিলো ‘লিটল রিভার ব্যান্ড (এলআরবি)। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এই নাম বদল করে রাখা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড (এলআরবি)’।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
ওএফবি