কলকাতার খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত মারা গেছেন। কলকাতার প্রথম সারির সব তারকা অভিনেতার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়মুখ ছিলেন তিনি।
পুরুষের পোশাকের কথা ভাবলেন এক মহিলা, তাও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ১৯৯১ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসের কনক্লেভ-এ প্রথম তার ডিজাইন করা পোশাক প্রদর্শনী করেছিলেন শর্বরী দত্ত। তারপর ২৯ বছর ধরে ফ্যাশন জগতে শর্বরীই ছিলেন বাঙালি তারকাদের প্রথম পছন্দ। এমনকি ঐশ্বরিয়ার বিয়েতে অভিষেককে উপহার দেওয়া ধুতিটাও বানিয়েছিলেন শর্বরী। মকবুল ফিদা হুসেন, সচীন টেন্ডুলকারও ছিলেন তার গ্রাহক। সৃজিত-মিথিলার বিয়েতেও সৃজিতের ধুতিতে ছিল শর্বরীর হাতের ছোঁয়া। কোয়েল মল্লিকের বিয়েতেও বরের পোশাকের দায়িত্ব ছিল তার।
শুরুর দিকে শর্বরী দত্তের সঙ্গী হয়েছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি শর্বরীদির পোশাকের প্রথম মডেল ছিলাম। খুব আলোড়ন ফেলেছিল ওই শুট। তার পর থেকে ছবি হোক বা পুজোর কেনাকাটা, শর্বরীদিকে ফোনে জানিয়ে দিতাম আমার কী চাই। উনি জানতেন আমার পছন্দ! খুব বাজে সময় এখন। কী আর বলব! কলকাতার লেজেন্ডের সারিতে ওঁর নাম থেকে গেল। আমাদের জন্য রইল ওঁর সৃষ্টি!
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, শর্বরীদি একজন পরিপূর্ণ নারী ছিলেন। ওই হাসি, কপাল জোড়া টিপ! আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইনার তো বটেই, কিন্তু নানা সঙ্কটের মধ্যেও কাজের মধ্যে একটানা নিজেকে প্রকাশ করে চলেছিলেন। আমার বরের ইজিপশিয়ান মোটিফের বিয়ের পাঞ্জাবি আজও যত্ন করে রাখা আছে। নাহ্, তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।
অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরটা পেয়ে এত অবাক হয়েছি, যে কী বলব বুঝতে পারছি না। আমাদের বিয়ের সময় রানের পাঞ্জাবির দায়িত্ব ছিল ওঁর। প্রথম আলাপেই মানুষকে এত আন্তরিক করে নিতে পারতেন! এটা মানুষ হিসেবে একটা বিশাল গুণ ছিল তাঁর। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির আইকন তো ছিলেনই, বিশেষ করে পুরুষদের সাজপোশাকে উনি একটা বিপ্লব এনেছিলেন। স্রেফ একটা পাঞ্জাবিই যে শুধু পুরুষের পোশাক হতে পারে না, তাতে যে কত রকমের কাজ আর স্টাইল থাকতে পারে, সেই চোখ আমাদের উনিই খুলে দিয়েছিলেন।
নিজেকে ফ্যাশন ডিজাইনার বলতে চাইতেন না তিনি। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, তিনি এক জন শিল্পী। ইদানীং শহর নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। বারাণসী, রোম আর কলকাতা—তিন শহরের ফ্যাব্রিক আর ক্রাফ্টকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পোশাকের শরীরে।
Shocked to learn about the demise of #SharbariDutta who put Bengal on the map with constant experiments of Bangali clothing and creations. I'm lucky to have worked and been styled by her. I hope she's in a better place now #RestInPeace pic.twitter.com/c2knNvjidN
— Raj chakraborty (@iamrajchoco) September 18, 2020
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ ৬৩ বছর বয়সে কলকাতার ব্রড স্ট্রিটের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ যদিও তার মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
এমকেআর