আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতার নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে কে বা কারা চালাচ্ছে- এমন খবর একাধিকবার গণ্যমাধ্যমে এসেছে। অথচ তার নামে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।
এবার দেশের অন্যতম সেরা অভিনেত্রীকে পড়তে হলো নতুন বিপাকে। ববিতার ছেলে অনিকের নাম ব্যবহার করে নেওয়া হয়েছে প্রতারণার আশ্রয়। এই বিষয়ে ববিতা বলেন, অনিক নাকি একজন পরিচালককে ফোন দিয়ে বলেছে, সে ববিতার ছেলে। কাজ করে কালের কণ্ঠে। পত্রিকাটির জন্য নাকি ওই পরিচালকের সাক্ষাৎকার নেবে। অবাক কাণ্ড! আমার ছেলে কানাডার অন্টারিওতে পড়াশোনা শেষ করে জব করছে। ক’দিন পরেই পিএইচডি শুরু কররে। আর সে নাকি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পরিচালকদের ইন্টারভিউ করবে..! বললেন, বিস্মিত ববিতা।
ববিতা বলেন, ‘আরও কয়েকজন পরিচালককে আমার ছেলের নামে ফেসবুক আইডি খুলে নক দেওয়া হয়েছে। তারপর ফোন নম্বর নিয়ে কথাও বলেছে। কেউ যদি বলে আমি ববিতার ছেলে অনিক, তাহলে নিশ্চয়ই মানুষজন তো সাড়া দেবেই। অনেক প্রবীণ পরিচালক রয়েছেন, যারা হয়তো সামাজিক মাধ্যমের এ ধরনের বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বোঝেন না। নিশ্চয়ই তারা এ রকম ফাঁদে পড়তে পারেন, জানি না কেউ ভুক্তভোগী হয়েছেন কি না! তবে বিষয়টি নিয়ে আমি সত্যিই চিন্তিত। ’
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে ববিতা বলেন, ‘যারা এসব সাইবার অপরাধ করছে। তাদের কৌশলও অভিনব। যেমন একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে অনিক পরিচয়ে কথা বলার সময় ওই ডিরেক্টরকে বলে, ‘আঙ্কল, আম্মু বলেছিল...। আচ্ছা আঙ্কেল, আপনার সিনেমায় যে রিয়াজ অভিনয় করেছিল ওটার নাম কী যেন! আপনার সবচেয়ে আলোচিত ওই সিনেমার নামটা..? মানে, তাদের পেট থেকে কথা বের করে প্রতারক কথা চালিয়ে নিচ্ছে। ভাগ্যিস, আমাকে কেউ কেউ বলেছে বলেই আমি এখন সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি হ্যান্ডেল করবো। ’
ছেলে অনিকের বিষয়ে ববিতা বলেন, ‘ও এখন নিজের চাকরি আর পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। কানাডার অন্টারিওর ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। চাকরি করছে। শিগগিরই পিএইচডি গবেষণা করবে। এখন তার জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। আমার ছেলেটাকে যদি ডিস্টার্ব করা হয়, তাহলে কেমন লাগে...! এটা টু মাচ হয়ে গেছে। চম্পা ও আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ে যা তা করেছে, অনেক নিষেধ সত্ত্বেও শোনেনি তারা। এবার আমার ছেলেটাকেও বিরক্ত করছে। এটা ভারি অন্যায়। ’
আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, ‘আমি একেবারেই ফেসবুক ব্যবহার পছন্দ করি না। ঠিক ওই জগতে আমি অভ্যস্ত নই, আমার ভালো লাগে না। এমন একটি জগতে আমার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করছে, এটা তো খুবই অনৈতিক। আমি প্রথমে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করবো। এরপর সাইবার অপরাধ দমন সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে আইনি পদক্ষেপ নেবো। ’
১৯৬৮ সালে বড় বোন সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সিনেমায় তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। তিনি কলম নামের একটি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছিলেন সে সময়। পরে জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম ‘ববিতা’ রাখা হয়।
১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় অভিনয় করেন প্রথম নায়িকা চরিত্রে। এরপর নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন এ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী হিসেবে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
ভারত উপমহাদেশের হয়ে অস্কারজয়ী একমাত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন ববিতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২০
ওএফবি