অনেকদিনের গুঞ্জনকে সত্যি করে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফেসবুক পোস্টে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা আসার পরই সবাই উন্মুখ ছিলেন তার স্বামী পারভেজ মাহমুদ অপুর বক্তব্য জানতে। রোববার (২৩ মে) সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের পৃথক থাকার বিষয়টা স্বীকার করলেও বিস্তারিত জানাননি কেউই।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের অনুভূতি ও অবস্থান অত্যন্ত মার্জিতভাবে তুলে ধরেছেন পারভেজ মাহমুদ অপু। রোববার রাতে ফেসবুকে তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্পর্কের সংজ্ঞা নিয়ে দারুণভাবে বক্তব্য পেশ করেছেন অপু। আর তাতে সহমর্মিতা ও ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন অনুরাগীরা।
ফেসবুক পোস্টে অপু লেখেন, ‘একটি সম্পর্ক গড়তে গেলে যেসব গুণ থাকে সেগুলো হলো সততা, ওয়াদা, বিশ্বস্ততা, বন্ধুত্ব, দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা, বোঝার ক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও ভালোবাসা, নিজস্ব বিশ্বাস ইত্যাদি। আর সম্পর্ক হওয়ার পর সেটা পরিবর্তিত হতেই পারে, আমরা বেঁচে আছি সম্পর্ক নিয়ে সম্পর্কের বন্ধনে বন্দি হয়ে। আবার সম্পর্ক কখনো শেষও হয় না, শুধু পরিবর্তিত হয় ।
বিচ্ছেদ যে কোনও সম্পর্কে যে কোনও সময় আসতে পারে। যে কোনও বিচ্ছেদই কষ্টদায়ক। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের নিজের মতো করে বাঁচার স্বাধীনতা রয়েছে। আর এতে করে তিনি/তারা নিজের মতো করে ভালো থাকতেই পারেন।
সম্পর্কগুলো স্থায়ী হোক এমনটাই সবাই চায়, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। দেখা যায়, সারাজীবন দুজন পাশাপাশি থাকার পর মৃত্যু এসে একজনকে নিয়ে যায়। বা দুজন এর মতের মিল ও বিশ্বাস আলাদা হলে তখন একসাথে থাকার চেয়ে আলাদা থাকতে চাই, এতে দোষের কিছু তো নাইই বরং এটা উভয়ের জন্য ভালো।
আমাদের বাঙালি সমাজ এখনও সেভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। তাই তো ডিভোর্স কথাটা শুনলেই অনেকেরই কান ভোঁ-ভোঁ করে ওঠে। এই কারণেই ডিভোর্সির দিকে কপাল কুঁচকে তাকানোটাই এই সমাজের একটা অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্পর্ক তৈরি করার মতন, সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসাও খুব স্বাভাবিক। মানুষের জীবনে অনুভূতির সংকোচন, সম্প্রসারণ হতেই পারে। একসাথে থাকতে না চাওয়ার কারণ জন্মাতে পারে। ভালো না লাগতে পারে। বিশেষ কোন কারণে আলাদা হওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। আবার কেউ কেউ মানিয়ে নিয়েও বেঁচে থাকে।
দুজন মানুষের ভেতর আভ্যন্তরীণ বনিবনা না হলে, একসাথে থেকে তিক্ততা বাড়ানোর কোন মানেই হয়না। তার চেয়ে, দুজন মানুষ আলাদা হয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটুকু বাঁচিয়ে রাখার দৃশ্যই সুন্দর। যে কোনও বিচ্ছেদই কষ্টদায়ক। কিন্তু কোনও সম্পর্কই হয়তো পুরোপুরি শেষ হয় না, সময়ের সঙ্গে বদল আসে দুজনের বোঝাপড়ায়।
আসলে ডিভোর্সের পর সম্পর্কের নাম বদলে যায় শুধু। একে অপরের কথা শেষ হয়ে যায় না, কেউ কারো শত্রু হয়ে যায় না, বন্ধুত্বও শেষ হয়ে যায় না। অনেক চাওয়া পাওয়া অনেক ভালোবাসা, আকাঙ্ক্ষা ফসলে বৈবাহিক সমন্ধ গড়ে ওঠে। তার ভাঙনকালে যন্ত্রণা হওয়া অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনার জীবন সেখানেই শেষ হয়ে গেল। এমনও নয় প্রাক্তন-এর প্রতি থাকবেই তীব্র বিদ্বেষ!
ডিভোর্স সত্ত্বেও প্রাক্তনের প্রতি সম্মান ধরে রাখা সম্ভব। আর এই সম্মানটা মনের মধ্যে পোষণ করেই নিজেদের মর্যাদা অটুট রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আর আশা করছি, আমাদের পরিচিত পরিজনেরা শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের এই সিদ্ধান্তকে পজিটিভভাবে গ্রহণ করে আমাদের সাথে সাথে থাকবেন।
আর একটা অনুরোধ করতে চাই, আদর্শিক পার্থক্য বা নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে গালিগালাজ তথা নেতিবাচক মানসিকতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। এখনো কিছু মানুষ আছে যারা মূল্যবোধ, দায়বদ্ধতা, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস এই শব্দগুলোর মানে বোঝে। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, নিজের আপত্তি বা ক্ষোভ যৌক্তিক এবং শোভনীয় ভাষায় তুলে ধরুন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২১
এমকেআর