বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের চলচ্চিত্র শিল্প ও ব্যবসা চরম সংকটজনক কাল অতিক্রম করছে। একের পর এক বন্ধ হয়ে মোট প্রেক্ষাগৃহ চালুর সংখ্যা তিন অংকের নিচে এসে নেমেছে।
উপরন্তু গত দেড় বছর ধরে কোভিড - ১৯ এর আগ্রাসনে অন্যান্য যে কোনো শিল্প ও ব্যবসা অঙ্গনের তুলনায় চলচ্চিত্রের সার্বিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেটা আদৌ টিকে থাকবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাগৃহগুলোর আধুনিকায়ন এবং নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরির লক্ষ্যে এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ তহবিল গঠনের জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত সার্কুলারে ইতিমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে; একটি প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারে / নির্মাণে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে; যার সুদ হবে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ এবং পরিশোধের মেয়াদ হবে ৮ বছর।
এই পুনঃব্যবহারযোগ্য তহবিলের বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলেই আশা করেছিলেন, প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মধ্যে ঋণ নিয়ে সংস্কার এবং নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণে প্রচুর আগ্রহ সৃষ্টি হবে। উন্নততর ও আরামদায়ক অবস্থায় ঘরমুখী দর্শককে আবার প্রেক্ষাগৃহমুখী করবে। পাশাপাশি বাজারটা শক্তিশালী হয়ে গেলে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বাড়বে এবং মেধাসম্পন্ন নির্মাতারা ব্যবসাসফল সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই তহবিল ঘোষণার কয়েকমাস গত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য কোনো প্রকল্প প্রস্তাব বা আবেদন জমা পড়েছে বলা জানা যায় না।
এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাশের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, প্রথমত-বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্ত তফসিলি ব্যাংগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে লোকাল ব্রাঞ্চগুলোতে এ বিষয়ে নিয়মনীতি ও পদ্ধতি উল্লেখ করে কোনো নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায়, এই বিষয়ে শাখার ব্যবস্থাপকেরা অজ্ঞতা ও অনীহা প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই জটিলতা নিরসনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ এবং সম্ভাব্য ব্যবহারকারী হিসেবে প্রদর্শক সমিতির প্রতিনিধি নিয়ে একটি সমন্বয় সভা হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত-চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির মতে, দেশে যে সব সিনেমা নির্মিত হয়, সেগুলো দিয়ে প্রেক্ষাগৃহগুলোর ব্যবসা চালিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই একে একে বন্ধ হতে হতে এখন ৮ শতাংশ প্রেক্ষাগৃহ কোনোরকমে চালু রয়েছে। ব্যাংকগুলির স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, কোনো ঋণ ছাড়াই যেখানে সিনেমাহল টিকে থাকছে না, সেখানে সুদসহ ঋণের অর্থ কীভাবে প্রেক্ষাগৃহের মালিকগণ ফেরত দেবেন!
লায়ন সিনেমা হলের কর্ণধার মির্জা খালেক বলেন, ব্যবসাসফল সিনেমা ছাড়া সিনেমাহলের ব্যবসার কোনো উন্নয়ন ঘটবে না। দেশে নির্মিত সিনেমা দিয়ে যেহেতু সিনেমাহলগুলিকে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না , সেহেতু প্রদর্শক সমিতির দীর্ঘদিনের আবেদনে সাড়া দিয়ে সরকার যদি উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত সিনেমা আমদানির উপর বলবৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এবং ভারতীয় সিনেমা সরাসরি আমদানির সুযোগ দেন তাহলে ঘরমুখী মধ্যবিত্ত দর্শককে আবারও প্রেক্ষাগৃহমুখী করা সম্ভব। এতে প্রেক্ষাগৃহের আয় নিশ্চিতভাবেই বেড়ে যাবে। পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নতি দেখলে ব্যাংকগুলিও আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে আসবে ঋণ দিতে।
পরিচালক ও প্রযোজক সমিতির নেতৃবৃন্দও মনে করেন যে, প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হয়ে চলচ্চিত্র ব্যবসায় যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রেক্ষাগৃহ না বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। তাই সীমিত আকারে ভারতীয় সিনেমা আমদানির ক্ষেত্রে তারা বাধা না দিয়ে, ভারতীয় সিনেমা আমদানি করাকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা দিক।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২১
জেআইএম