ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

অপু ভাই প্রসঙ্গ টেনে নিজের হতাশার কথা জানালেন থিয়েটারকর্মী

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২১
অপু ভাই প্রসঙ্গ টেনে নিজের হতাশার কথা জানালেন থিয়েটারকর্মী রাকিব সিদ্দিকী ও অপু ভাই

ক্যারিয়ার নিয়ে প্রত্যেক অভিনেতারই রয়েছে নানা ত্যাগের গল্প।  হুট করেই কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না।

তেমনি এক থিয়েটারকর্মী নিজের সংগ্রাম ও হতাশার কথা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।  

সম্প্রতি টিকটকার অপু ভাই একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। মূলত তার প্রসঙ্গ টেনেই রাকিব সিদ্দিকী নামের ওই থিয়েটারকর্মী নিজের ক্যারিয়ার ও সিনেমা করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন। যা রীতিমত ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।

রাকিবের সেই দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টেটি তুলে ধরা হলো-

সপ্তাহে তিন দিন ফার্মগেট থেকে পায়ে হেটে টিএসসি গিয়ে থিয়েটার করে নিজেকে তৈরি করেছি। পাশাপাশি টানা তিন বছর কোনো একজন ডিরেক্টরের পিছনে সময় দিয়ে একটি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি, চরিত্রটি নিয়ে নানান রকম স্বপ্ন দেখেছি, ভেবেছিলাম বড় পর্দায়ে নিজের অভিনয় টুকু দেখে নিজের অভিনয়ের স্বাদ নিজেই গ্রহণ করবো। নিজেকে চরিত্রের প্রয়োজনে প্রস্তুত করছিলাম, সাথে সাথে অপেক্ষায় ছিলাম কবে শুরু করবেন ডিরেক্টর সিনেমাটির শুটিং। ’ 

‘দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে সিনেমাটির শুটিংয়ে গিয়ে নানান রকম বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হয়ে টানা ১২ দিন/রাতের একটি লট করে ঢাকায় ফিরেছিলাম বিনা পারিশ্রমিকে। ব্যক্তিগত খরচের টাকাটাও চাইনি ডিরেক্টরের কাছে কারণ তার জন্য ছিল আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে অপেক্ষায় ছিলাম পারিশ্রমিকের, ডিরেক্টর অন্যদের পারিশ্রমিক দিলেও সে আমাকে কোনো পারিশ্রমিক দেননি। কিছু মাস পরে আবার দ্বিতীয় লট করতে ঢাকার বাহিরে যাই পুরো টিম। সেখানেও অত্যন্ত বাজে অভিজ্ঞতার সাথে টানা ৮ দিন/রাত শুটিং করে ঢাকায় ফিরেছি বিনা পারিশ্রমিকে। ’ 

‘এবার একজন শিল্পী হয়ে নিজের পারিশ্রমিক দাবি করলে ডিরেক্টর আমাকে বলেন, কী ডকুমেন্টস আছে তোমার কাছে যে তুমি আমার কাছে পারিশ্রমিক দাবি করছো? আমি কিছু সময় চুপ থেকে তাকে জবাব দিলাম, দাদা আমি আপনাকে এতো দিন আমার অভিভাবক মনে করেছি। আপনার পিছনে দীর্ঘদিন সময় দিয়ে আপনার ব্যক্তিগত কাজ গুলো করে দিয়েছি শুধুমাত্র আপনাকে ভালোবেসেছি বলে, বিশ্বাস করেন দাদা যদি আমার টাকাটা প্রয়োজন না হতো তাহলে আমি আপনার কাছে টাকা কখনই চাইতাম নাহ, সত্যি দাদা আমার কিছু টাকার খুবই দরকার যদি পারেন আমাকে কিছু টাকা দিয়েন। ’ 

আমার এই কথা বলায় সে মিডিয়ার অন্যান্য ব্যক্তিদের দিয়ে আমাকে উদাহরণ দেয় যে আমি পারিশ্রমিক দাবি করলে আমি নাকি মিডিয়াতে টিকতে পারবো না। আমি তার উদাহরণ শুনে বুঝতে পারছিলাম তিনি আমার বিশ্বাস আর ভালোবাসার দুর্বলতার সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে এতোগুলো দিন আমাকে ব্যবহার করেছে। আমার সময়গুলো নষ্ট করেছে। কাজের কোনো চুক্তিপত্রই সে আমার সাথে করেননি। আর আমিও ভুল করেছিলাম তাকে ভালোবাসার ফলে ঐ চুক্তিপত্রটিকে গুরুত্ব না দিয়েই তার প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করতে গিয়েছি কঠোর পরিশ্রম করেছি।
তারপর আমি বাধ্য হয়ে প্রডিউসারের সাথে যোগাযোগ করি ফোন কলের মাধ্যমে, তাকে খুলে বলি আমার সাথে হওয়া ঘটনাগুলো। সে আমাকে এক কথায় জবাব দেয় যে রাকিব তোর, টাকার তো হিসাব হয়েছে প্রথম লটের টাকাতো আমি দিয়ে দিয়েছি। তখন আমি তাকে নিজে লজ্জার সাথে বলি যে দাদা সেই টাকাটা আমি পাইনি। যাইহোক দাদা আপনি এই লটের টাকা টা আমার বিকাশে দিয়েন অন্য কারো হাতে দিয়েন নাহ। তখন সে আমাকে বলে যে রাকিব তুই ভাই কষ্ট পাইছো নাহ। আমি তোকে এবার নিজের হাতে টাকাটা দেবো।  

ঈদের আগ মুহূর্ত ছিল বলে টাকাটা সত্যি আমার খুবই প্রয়োজন ছিল প্রডিউসার আমাকে আজ না কাল করতে করতে অনেক দিন ঘুরিয়ে ঈদের আগের দিন আমার বিকাশ নাম্বারে মাত্র ১ হাজার টাকা পাঠায়। এক হাজার টাকা পেয়ে আমার মনে হচ্ছিল যে শিল্পীরা এতোটা মূল্যহীন।  

আমার এই স্ট্যাটাসটা যে পড়ছেন তার বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, আমি এই লজ্জাকর কথাগুলো কার কাছে বলতাম? আমি কার কাছে আমার দাবির কথা বলতাম? আমার কিছুই করার ছিল না, আমি চুপ করে ছিলাম এতোগুলো দিন। কিন্তু আজ লিখলাম কেনো জানেন! 
যারা কিনা উচ্চারণ করতে জানেন না, যারা কিনা থিয়েটার করেননি, যারা কিনা অভিনয় জানেন না, যারা কিনা শিক্ষামূলক কিছু করেন না, যারা কিনা ম্যানার জানেন না, যারা কিনা শুধু মাত্র টিকটক করে আমার এই ইন্ডাস্ট্রির সুনাম ধন্য পরিচালকের এক মাসের অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দ্বারা অভিনেতা হয়ে উঠবেন।  

আমার না এই সুনাম ধন্য ডিরেক্টরের উপর রাগ হচ্ছে না বরং আমার নিজেকে নিজের অসহায় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে থিয়েটার করে এখন আর কোনো লাভ নেই মনে হয়। হতে হবে হাস্যকর কোনো ব্যক্তি, তাহলেই ডিরেক্টরের মূল্যবান দৃষ্টি পরবে। থিয়েটারকর্মী হয়ে আমিতো কোনো মূল্যায়ন পাইনি, যা পেয়েছেন টিকটক করে অপু ভাই।  

আমি কাউকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করছি না। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো শেয়ার করছি। আচ্ছা আপনারা কী আমাকে আমার প্রতিবাদের জায়গাটা দেখিয়ে দেবেন, যেখানে গিয়ে আমি আমার প্রতিবাদটুকু করতে পারবো, বা আমি আমার পারিশ্রমিকটা দাবি করতে পারবো।  

পুরো ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমার দাবি আমি দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে এ সমাজে বেঁচে থাকতে চাই, নিজের শিল্পচর্চা দিয়ে পারিশ্রমিকটা পেতে চাই। যারা সত্যিকারের শিল্পী তাদের অভিভাবক চাই।
 
আমার কথা গুলো সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি কারো বিপক্ষে অভিযোগ করছি না। আমি শুধুই আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।