ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

হোয়াট ইজ অস্ট্রেলিয়া ডে

ক্যানবেরা শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশি নির্মাতার তথ্যচিত্র

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২১
ক্যানবেরা শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশি নির্মাতার তথ্যচিত্র

ক্যানবেরা শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে (সিএসএফএফ) স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের নির্মাণ করা তথ্যচিত্র ‘হোয়াট ইস অস্ট্রেলিয়া ডে’।

অস্ট্রেলিয়া দিবস এবং অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের নির্যাতনের ইতিহাসের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রটি আগামী ১৭ নভেম্বর ক্যানবেরায় প্রদর্শিত হবে।

তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন রেমন্ড সালোমন। এতে অভিনয় করেছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশুশিল্পী আট বছর বয়সী আদ্রিতা আকাশ।



তথ্যচিত্রটিতে নেপথ্যসঙ্গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী শামা রেইন। সিনেমাটোগ্রাফি এবং এডিটিং করেছেন শিমুল শিকদার। তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের বিখ্যাত অভিনেতা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত রিয়াজ আহমেদ।

পরিকল্পনা সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান পিঙ্ক ক্রিয়েটিভ। ক্ষুদে তথ্যচিত্রটির নির্মাতাসহ অধিকাংশ কলাকুশলী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

মাত্র চার মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ক্ষুদে তথ্যচিত্রটি অস্ট্রেলিয়ার জাতিগত চেতনা, অস্ট্রেলিয়া দিবস উদযাপনের তারিখ হিসেবে ২৬ জানুয়ারিকে বেছে নেওয়া এবং এর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের যোগসূত্রের বিতর্ককে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ইংরেজরা অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম আগমন করে। তারপর শুরু হয় এখানকার আদিবাসীদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন। শতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলা এই অত্যাচারের মধ্যে রয়েছে আদিবাসীদের হত্যা, লুটতরাজ, ভূমি কেড়ে নেওয়া, তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করে দেওয়া, কৃষ্ণবর্ণের আদিবাসী শিশুদের জোর করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, বর্ণবাদী আইন প্রণয়ন করে আদিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা এবং অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান থেকে আদিবাসীদের নাগরিকত্ব রহিত করা।

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা তাই ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে তাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসার দিন হিসেবে গণ্য করেন। তাই তারা দিনটিকে রাষ্ট্রীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা মেনে নিতে পারেননি কখনো। জাতিসত্তায় নাড়া দেওয়া এই বিতর্ক অস্ট্রেলিয়াকে আজও জাতিগত চেতনার দিক থেকে বিভাজিত করে রাখে।

ক্ষুদে তথ্যচিত্রটি আরেকটি ভিন্ন আঙ্গিকে গুরুত্ব বহন করে, কেননা এর নির্মাতা ও শিল্পীদের জাতিগত শেকড় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মতো করে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষরাও দুই শতাব্দী ধরে ইংরেজদের হাতে নির্যাতিত হয়েছিল।



তথ্যচিত্রটির নির্মাতা রেমন্ড সালোমন একজন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গীতিকার। ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া দিবস পালনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এমন উদযাপন আমাদের জাতিগত বিবেককে আহত করে।

তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার জাতিসত্তা নিয়ে সবচেয়ে মর্মান্তিক প্রশ্নটি খুব সহজেই করা যায়। তবে এর উত্তর দেওয়া সহজ নয়। মাত্র ৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ক্ষুদে তথ্যচিত্রটি অস্ট্রেলিয়ার রক্তক্ষরিত হৃদয়ের ক্ষতচিহ্ন সবার সামনে আরও উন্মুক্ত করেছে। জাতি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার জন্মদিন ঠিক সেই দিনেই উদযাপিত হয়, যেদিন এই ভূমিতে আদিবাসীদের ওপর মর্মান্তিক নিপীড়ন ও হত্যার সূচনা হয়েছিল। এটি আমাদের তথা মানবতার বিবেকের ওপর এক শূন্যতা নামিয়ে আনে। দেশ ও জাতিগত উন্নয়নের স্বপ্ন আমরা কখনোই পরিপূর্ণভাবে অর্জন করতে পারব না, যতদিন আমরা ২৬ জানুয়ারির মতো অস্ট্রেলিয়ার জাতিসত্তা হরণের দিবসকে দেশটির জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করে যাবো।

ক্যানবেরা শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চূড়ান্ত তালিকায় মনোনীত পাওয়া ‘হোয়াট ইস অস্ট্রেলিয়া ডে’ তথ্যচিত্রটি ক্যানবেরার বিখ্যাত ড্যান্ডি সিনেমা হলে ১৭ নভেম্বর প্রদর্শিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২১
এমআরএ/এমজেএফ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।