গাজীপুর: নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন বলেছেন, ‘হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে অনেকে গবেষণা করছেন। অনেকেই তাকে নিয়ে চর্চা করছেন।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে তার কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবর জিয়ারত, কেক কাটা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে শিশু পুত্র নিশাত ও নিনিদসহ নুহাশপল্লীর স্টাফ এবং হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কবর জিয়ারত, দোয়া ও পুষ্পস্তক অর্পণ করে দুই পুত্রকে নিয়ে কেক কাটেন শাওন। এছাড়া সকাল থেকেই ভক্তরা দুর-দূরান্ত থেকে এসে প্রিয় লেখকের কবরে শ্রদ্ধা জানান এবং নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখেন।
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, যারা হুমায়ুন আহমেদকে ভালোবাসেন, ‘যারা হুমায়ুন আহমেদের পাঠক, হুমায়ুন আহমেদের নাটকের-সিনেমার দর্শক, হুমায়ুন আহমেদের গানগুলো যারা ভালোবাসেন, তারা হুমায়ুন আহমেদকে আজীবন ভালোবেসে যাবেন। তারাই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হুমায়ুন আহমেদের লেখা ও সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরবেন। এটাই আমার এবং আমাদের পরিবারের আজীবনের প্রাপ্তি হবে। যারা হুমায়ুনকে ভালোবাসেন, তাদের অনেকেই হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে কাজ করতে চান। তবে অনুরোধ করছি, তাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা কেউ করবেন না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে যেনতেনভাবে কাজ করার চেষ্টা বা হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে ঠাঁস করে একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা, একটা বই লিখে ফেলা বিষয়টি নিয়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে। ’
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার প্রথম নাম ছিল শামসুর রহমান পরে তার নাম পাল্টে হুমায়ুন আহমেদ রাখা হয়। তার ডাক নাম ছিল কাজল। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমেরিকার একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীণ অবস্থায় মারা যান। পরে তাকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচুগাছ তলায় দাফন করা হয়।
নুহাশ পল্লীর ভাস্কর আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘শনিবার ভোর রাতে মেহের আফরোজ শাওন তার দুই পুত্রকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে যান। রাত ১২টা ১মিনিটে নুহাশপল্লীর স্টাফরা ১০০১টা মোমবাতি প্রজ্বলন করে কেক কাটেন। ’
ভাস্কর আসাদ, হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর বৃষ্টি বিলাশ কটেজে ৭৩টি ভাস্কর্যের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। যা ছিল সবই গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি।
হুমায়ুন আহমেদের জীবদ্দশায় লিখেছেন দুই শতাধিক উপন্যাস। এ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাস দু’টি দিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কবি’, ‘বাদশা নামদার’সহ অসংখ্য উপন্যাসে। তার অমর সৃষ্টি ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে। এরমধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখকশিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন সময় দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০, নভেম্বর ১৩, ২০২১
আরএস/এনএটি