অভিনেতা হিসেবে যেমন পরিচিত, চিকিৎসক হিসেবেও তেমনি বেশ পরিচিতি রয়েছে ডা. এজাজুল ইসলামের। যাকে সবাই ডা. এজাজ নামেই চেনেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা গরিবের ডাক্তার হিসেবে প্রশংসিত। অভিনয় ও চিকিৎসা সমান তালেই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে দুই পেশায় বর্তমান ব্যস্ততা ও নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলেছেন ডা. এজাজ। সেখান থেকে বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
বাংলানিউজ: প্রতি মাসের প্রথম দিন সহশিল্পীদের চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হঠাৎ এমন পরিকল্পনার কেন?
ডা. এজাজ: অনেক আগে থেকেই এমন ইচ্ছে ছিল। প্রায় শুটিংয়েই কারো না কারো শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরামর্শ দিই। সেখান থেকেই চিন্তা করেছিলাম, যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করি তাদের প্রতি একটা দায়িত্ব রয়েছে। সেই জায়গা থেকে মাসের একদিন তাদের জন্য বরাদ্দ রাখলাম। এতে যদি আমার সহকর্মীরা কিছুটা উপকৃত হন, সেটা আমার জন্য অনেক আনন্দের হবে।
বাংলানিউজ: অভিনয় ও চিকিৎসা সেবা, একসঙ্গে দুইটি কীভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন?
ডা. এজাজ: মাসে ১৮ দিনের মতো চেম্বারে সময় দিই। এর মধ্যে চার শুক্রবার আবার শুটিং করি। একদিন চেম্বার, একদিন শুটিং এভাবে মেইনটেইন করে চলি। টানা আউটডোরে গেলে এই রুটিনের এদিকে সেদিক হয়। তারপরও মাসে ১২ থেকে ১৪ দিন শুটিং করি, অন্যান্য দিনে চেম্বারে বসি।
বাংলানিউজ: ঢাকা মেডিক্যাল থেকে অবসরের পর কোথায় রোগী দেখেন?
ডা. এজাজ: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখান থেকে দুই বছর আগে অবসর নিয়েছি। এখন গাজীপুর চৌরাস্তায় চেম্বার করি। সকালে যাই, সারাদিন থেকে রাতে বাসায় ফিরি। রোগীর চাপ থাকলে কখনো রাত ২-৩টাও বেজে যায়।
বাংলানিউজ: এতো ব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে সময় দিতে পারেন?
ডা. এজাজ: নিজের জন্য খুব কম সময় বরাদ্দ। শুটিং ও ডাক্তারি দুইটা মিলিয়ে চলছে। সন্তানরাও বড় হয়ে গেছে, তাদের নিজেদের ব্যস্ততা বেড়েছে। সারাদিন শেষে রাতে ১ ঘণ্টা বউ-বাচ্চাদের নিয়ে আড্ডাবাজি হয়। আমি মনে করি এতটুকু অবসরই যথেষ্ট।
বাংলানিউজ: আপনার পরিবার সম্পর্কে যদি কিছু বলতে চান...
ডা. এজাজ: পরিবারে আমার স্ত্রী রয়েছে। এছাড়া দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। দুই মেয়েই ডাক্তার, বড় ছেলেটিও ডাক্তার। ছোট ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখে আছি।
বাংলানিউজ: পেশা হিসেবে চিকিৎসক না অভিনেতা, কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
ডা. এজাজ: অভিনয় করি এটা সবার জানা, তাই চিকিৎসক পরিচয় দিতে বেশি ভালো লাগে। এখানে মানুষের কষ্টের পাশাপাশি হাসি দেখতে পাই, সবমিলিয়ে ভালো লাগে। একজন রোগী যখন সুস্থ হয়ে আসে তার হাসিমুখ দেখে অনেক আনন্দ পাই। অভিনয়েও আনন্দ আছে। তবে এই আনন্দে প্রশান্তি আছে।
বাংলানিউজ: বর্তমান সময়ের নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কেমন?
ডা. এজাজ: আমি বলব- ভালো হচ্ছে। এখন তো অনেক বেশি প্রতিযোগিতা। আমরা যখন শুরু করেছিলাম, তখন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল, এখন সেটা বিশ্বব্যাপী। কত চ্যানেল, কতগুলো কাজের প্ল্যাটফর্ম! সেখান থেকে যদি দর্শকরা আমাদের নাটক দেখন, সেটাই অনেক বড় অর্জন। অনেক কাজ হচ্ছে তাই ভাবি কী হচ্ছে, কিন্তু সবই ঠিকঠাক মতো হচ্ছে। ভালোমন্দ মিলেই তো সৃষ্টিকর্ম। ভালোভাবে বিচার না করে কাজের মান নিয়ে গালি দেওয়া অন্যায়। আমি এর বিরোধিতা করি। আগেও ভালোর ভিড়ে খারাপ কাজ হয়েছে।
বাংলানিউজ: এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কী করা উচিত?
ডা. এজাজ: আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে আছি। তবে গল্প ও নির্মাণে আরো সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ প্রতিযোগিতার পরিধি বেড়েছে।
বাংলানিউজ: ইউটিউবে দেখছি আপনি ব্যক্তিগত চ্যানেলে বেশ সময় দিচ্ছেন…
ডা. এজাজ: ইউটিউব চ্যানেল সখের বশে করেছি। কিন্তু পরে দেখছি ভালোই চলছে, ভিউয়ার্স আছেন। কেউ আবার গালিও দিচ্ছেন। গালি খাওয়ার পরও ভালো লাগে, না হলে তো নিজের ভুল বুঝতে পারব না। এতে শোধরানোর সুযোগ তৈরি হয়। বিনোদনের পাশাপাশি সামনে স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাংলানিউজ: আপনাকে গরীবের ডাক্তার বলা হয়, এই উক্তিটি শুনতে কেমন লাগে?
ডা. এজাজ: অনেক ভালো লাগে। কিন্তু অনেকেই ভাবেন- এই লোকটি নিজেই কাজটি করাচ্ছে কিনা? আমার চেম্বারে এখন ছবি তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। আগে অনেকেই ছবি তুলতো, পরে দেখতাম অনেক কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিছে। বারবার যদি আপনাকে নিয়ে লেখা হয়, তখন মানুষ ভাবতেই পারে এই লোকটার এত প্রচার হয় কেন? সেই দিক থেকে চিন্তা করে চেম্বারে ছবি তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু মানুষ যদি আমার প্ররোচনা ছাড়া প্রশংসা করে সেটা ভালো তো লাগেই, অনেক তৃপ্তিও দেয়।
বাংলানিউজ: আপনার অভিনয়ের বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই?
ডা. এজাজ: বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছি। এর মধ্যে বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে ফরিদুল হাসানের ‘দৌড় দ্যা ট্রেন্ডি’ , আরটিভিতে যাচ্ছে হিমু আকরামে ‘শান্তি মলম ১০ টাকা’, বাংলাভিশনে যাচ্ছে ‘ভাড়াবাড়ি বারাবারি’, ‘মাছরাঙায়’ ‘অদলবদল’। এ গুলোর বাইরে মাঝে মধ্যে একক নাটকের কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এনএটি/জেআইএম