সুনামগঞ্জ: বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধলের মাঠে ‘মানুষ যদি হতে চাও, করো মানুষের ভজনা’ এই গানের কলিকে সামনে রেখে দুই দিন ব্যাপী লোক উৎসব শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে উৎসব শুরু হয়।
শাহ আব্দুল করিমের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালনী নদী পারে ওঠেছে সুরে মূর্ছনা। ভক্তরা নেচে-গেয়ে তার জন্ম উৎসব পালন করছেন।
শাহ আব্দুল করিমের জীবদ্দশায় ২০০৬ সাল থেকে ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব। প্রথম দিকে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করলেও এখন আর তা কেউ করছে না। ধল গ্রামের মানুষ ও করিম ভক্তরা মিলেই চালিয়ে যাচ্ছেন লোক উৎসব।
তার একমাত্র ছেলে উৎসব আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক শাহ নূর জালালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাউল সম্রাটের জীবন নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল মিয়া, দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন, ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন, আলী হোসেন, দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল, দিরাই প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সোয়েব হাসান চৌধুরী, সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম সর্দার।
সভা শেষে শাহ আব্দুল করিমের ভক্তদের অংশগ্রহণে শুরু হয় লোকগান ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।
উৎসবের দু’দিনই রাতভর শাহ আব্দুল করিম রচিত আধ্যাত্মিক, মরমী ও সারি গান পরিবেশন করবেন কণ্ঠশিল্পী আশিক, পাগল হাসানসহ স্থানীয় বাউলশিল্পীরা।
আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বাংলানিউজকে জানান, কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও গ্রামবাসীর উদ্যোগেই উৎসব করছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন এ উৎসবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে উৎসবে অংশ নিতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একুশে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার শক্তিতে বলীয়ান একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল শিল্পী শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ধল গ্রামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন। অভাবের তাড়নায় তিনি স্কুল ছেড়ে গৃহস্থের বাড়িতে রাখালের কাজ নেন। পড়াশোনা না করতে পারলেও মুখে মুখে গান রচনা করে গাইতে শুরু করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, সাতান্নর কাগমারী সম্মেলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেই তিনি গানকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন।
আব্দুল করিমের গানে ফুটে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, আছে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দিরাইয়ে এসে গান শুনে তাকে পুরস্কৃত করেন।
এছাড়াও মাওলানা ভাসানীসহ দেশের অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের মঞ্চে গান পরিবেশন করেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
এমএমজেড