ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দির আক্ষেপ

বিনোদন ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দির আক্ষেপ আজিজুর রহমানের সঙ্গে মেয়ে বিন্দি রহমান

আলোচিত সিনেমা ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতা আজিজুর রহমান ১৪ মার্চ কানাডার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর গত ২১ মার্চ জন্মস্থান বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।

কিংবদন্তি এই নির্মাতার স্মরণে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিএফডিসির জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আয়োজিত এ স্মরণ সভায় উপস্থিত থেকে নির্মাতা আজিজুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন- চিত্রনায়ক আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানী, চিত্রনায়িকা সুজাতা, রোজিনা, অঞ্জনা, নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, আব্দুল লতিফ বাচ্চু, কাজী হায়াত, মনতাজুর রহমান আকবর, শাহিন সুমনসহ অনেকে।

এই স্মরণ সভায় নির্মাতা আজিজুর রহমানের মেয়ে বিন্দি রহমান বলেন, আমার বাবা একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন, যিনি অনেক পরিশ্রম করে এই পর্যায় পৌঁছেছিলেন। বাবা ছিলেন কাজ পাগল একজন মানুষ। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাকে দেখেছি কাজের মাঝে ডুবে থাকতে। তার প্রতিটা সিনেমা ছিল ব্ক্তব্যধর্মী।

তিনি বলেন, চলচ্চিত্র জগতে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক শ্রম এবং সময় দিতে হয়। বাবা বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জন্য অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার আজীবন চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় করেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী গল্প, নিরলস পরিশ্রম আর নতুন প্রযুক্তির ওপর গবেষণা তার সিনেমাগুলোকে নিয়ে গেছে অন্য এক মাত্রায়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো তাইতো আলোচনায় আছে যুগের পর যুগ।

বিন্দি রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ব্যাক্তিগত জীবনে আমার বাবার কোনো আক্ষেপ ছিল না। তিনি নিজ হাতে তার পরিপূর্ণতার কথা লিখে রেখে গেছেন। কিন্তু সন্তান হিসেবে আমাদের আক্ষেপ রয়েছে। ৫২টি চলচ্চিত্রর নির্মাতা তিনি। যিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, অংকন শিল্পী, প্রযোজক, কাহিনীকার, পোস্টার মেকার, সেট ডিজাইনার, টাইটেল মেকার, মেকাপ আর্টিস্ট। তিনি একজন ভর্সেটাইল পর্সোনালিটির মানুষ হয়েও একবারও কোনো জাতীয় পুরস্কার পাননি।  

বিন্দি রহমান বলেন, বাবা চলচ্চিত্রকে এতোই ভালোবাসতেন যে জীবনের শেষ দিনগুলোতে চলচ্চিত্রের মানুষদের কল্যাণের জন্য কিছু কথা নিজ হাতে লিখে রেখে গেছেন এবং পরিকল্পনা করেছিলেন একটি ছাত্রবৃত্তির ব্যবস্থা করার। সবার সহযোগিতা পেলে উনার সন্তান হিসাবে আমরা তার স্বপ্নের এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে চাই।

আজিজুর রহমান ১৯৩৯ সালের ১০ অক্টোবর বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রুপচাঁন প্রামাণিক। তিনি স্থানীয় আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস ও ঢাকা সিটি নাইট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। চারুকলা আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে কমার্সিয়াল আর্টে ডিপ্লোমা করেছেন।   

আজিজুর রহমান ১৯৫৮ সালে ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে এহতেশামের সহকারী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ময়মনসিংহের লোককথা নিয়ে ‘সাইফুল মূলক বদিউজ্জামান’ মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে।  

ক্যারিয়ারে তিনি ৫২টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘অশিক্ষিত’, ‘মাটির ঘর’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘সাম্পানওয়ালা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘গরমিল’ ও ‘সমাধান’ ইত্যাদি।

মৃত্যুর আগে প্রায় দেড় বছর কানাডার টরোন্টোতে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত বছর অক্টোবরে কানাডা থেকে একটি ভিডিওবার্তা দিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।