জামালপুর জেলার একটি সিনেমা হল ছাড়াও তিনটি সরকারি অডিটোরিয়ামে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘গলুই’র। কিন্তু জেলার ইসলামপুর অডিটোরিয়ামের শো কয়েকদিন আগে বন্ধ করে দেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক।
বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রঙ্গনের অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এবার নিজের সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিবাদ জানালেন চিত্রনায়ক শাকিব খান।
নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে শাকিব খান এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন।
তিনি লেখেন, ‘‘করোনায় গত দুই বছর দেশের চলচ্চিত্র অনেকটাই থমকে ছিল। এবারের ঈদে ভালো মানের চলচ্চিত্রের মুক্তিতে গতি আসা শুরু করছিল। সবাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখছিলেন। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী কলাকুশলী থেকে শুরু করে সিনেমা হল মালিক - প্রত্যেকের তাই দৃষ্টিই ছিল ঈদের চলচ্চিত্রের দিকে। মুক্তির প্রথমদিন থেকেই আমার অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’র হল রিপোর্টও দারুণ পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে ‘গলুই’-এর দর্শকপ্রিয়তা ছিল শুরু থেকেই অন্যরকম ভালো লাগার। ’’
শাকিব খান লেখেন, ‘‘সুস্থ ধারার এই চলচ্চিত্র দেখতে মানুষ পরিবার নিয়ে আবার সিনেমাহল মুখী হয়েছেন; সংশ্লিষ্ট সবাইও তেমনটাই বলছিলেন। সব শ্রেণীর দর্শকদের থেকে ইতিবাচক সব প্রতিক্রিয়া পাচ্ছিলাম। এমনকি দেশের প্রতিষ্ঠিত সব গণমাধ্যমেও সেই খবর উঠে আসছিল। নতুন প্রজন্ম সরকারি অনুদানে তৈরি ‘গলুই’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন করে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছিল; যা আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করছিল। ’’
এই অভিনেতা আরো লেখেন, ‘‘কারও হয়তো অজানা নয় যে, ‘গলুই’-এর বেশিরভাগ শুটিং জামালপুর জেলায় হয়েছে। ফলে অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে ‘গলুই’ নিয়ে সেখানকার মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই জেলা শহরে নেই কোনো সিনেমা হল! বাধ্য হয়ে ‘গলুই’ সংশ্লিষ্টরা জেলা শিল্পকলাসহ তিনটি মিলনায়তনে ঈদের দিন থেকে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এসব মিলনায়তনে দর্শকেরও উপস্থিতি ছিল উপচে পড়া। ’’
জামালপুরে প্রদর্শনী বন্ধ প্রসঙ্গে শাকিব খান লেখেন, ‘একের পর এক সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হওয়ার এই সংকটকালে জামালপুরে বিকল্প ব্যবস্থায় ‘গলুই’ মুক্তির বিষয়টি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। যা হতে পারতো সিনেমা হলহীন অন্য জেলা কিংবা উপজেলা শহরগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত। বাস্তবে ঘটলো উল্টোটা! বাঁধ সাধলো জামালপুর জেলা প্রশাসন! সিনেমাপ্রেমীদেরও মন ভেঙে গেল। ’
প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘‘নানান মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, শত বছর আগের তৈরি সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট-এর দোহাই দিয়ে মিলনায়তনগুলোতে ‘গলুই’-এর প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে! যা শুধু আমাকে ব্যথিত করেনি, বরং বিস্মিত ও হতবাক করেছে। ‘গলুই’ চলচ্চিত্রটি যখন সাধারণ মানুষেরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন, পরিবার নিয়ে দেখছেন; তখন এর প্রদর্শনী বন্ধের খবরে চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটি মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। অতীতে বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়েছে! সেই সব চলচ্চিত্র প্রদর্শনে প্রশাসন সহায়তা করেছে। তাহলে ‘গলুই’র বিকল্প ব্যবস্থায় প্রদর্শন হতে সমস্যা কোথায়?’’
‘চলচ্চিত্রের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সরকারের নানামুখী পরিকল্পনার কথা শুনে আসছি। সিনেমাহল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের সঠিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, সিনেমা নির্মাণে বড় অনুদানসহ সরকারের বেশকিছু পরিকল্পনা হয়তো এখন বাস্তবায়নের পথে। একইসঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও চলচ্চিত্র উন্নয়নের আশ্বাস সবসময়ই দিয়ে থাকেন। আর সেই সময় যখন ব্রিটিশ আমলে তৈরি চলচ্চিত্র স্বার্থ বিরোধী আইন দিয়ে পথ রোধ করা হয়, তখন বিষয়টি হয়ে ওঠে সাংঘর্ষিক। এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে বাংলা চলচ্চিত্র দিয়ে বিশ্বজয় করা তো দূরে থাক, এগিয়ে যাওয়াই অসম্ভব। ’’
সবশেষে ঢাকাই সিনেমার এই শীর্ষ নায়ক লেখেন, ‘‘আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতায় খুব শিগগির জামালপুরসহ যেসব জেলায় সিনেমাহল নেই, সেখানকার মিলনায়তনগুলোতে সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘গলুই’-এর মতো সুস্থধারার চলচ্চিত্র দেশের মানুষকে উপভোগ করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২২
জেআইএম