রেমা-কালেঙ্গা থেকে ফিরে: বনবিভাগের সহায়ক সংস্থা হিসেবে ইউএসএইডের অর্থায়নে উইনরক ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ অ্যান্ড লাইভলিহুডস্ (ক্রেল) প্রকল্প।
রেমা-কালেঙ্গার বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যের প্রতিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ক্রেল থাকলেও, তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বনকর্মকর্তাসহ সংরক্ষিত এলাকার বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে কালেঙ্গার বিট অফিসার মাহবুব হোসেনের অভিযোগ, ক্রেল কী কাজ করে তা আমাদের বোধগম্য নয়। কয়েকদিন পর পর প্রকল্পের প্রতিনিধিরা আসেন। বনে ঘোরাঘুরি করে আর আমাদের দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে নিয়ে যান। তারা বনের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করছে না।
তার আরও অভিযোগ, ক্রেল নিয়ন্ত্রিত কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির (সিএমসি) গঠিত ৫টি সিপিজি গ্রুপের মধ্যে (বন টহল দল) সিপিজি হিমালিয়া গ্রুপ, সিপিজি হুগরিয়া গ্রুপ ও সিপিজি নোয়াবাদ গ্রুপ, এ ৩টি সচল রয়েছে। বাকি দুই সিপিজি গ্রুপ বাশুল্লা ও নিশ্চিন্তপুর-আলীনগর গ্রুপ কার্যত অচল। সিএমসি’র মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
সিএমসি ও সিপিজি’র কাজ হলো, নিঃশর্তভাবে বনবিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো বনের আশেপাশে বসবাসরত ভিলেজারদের জায়গা দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ মাহবুব হোসেনের।
তিনি বলেন, কালেঙ্গায় ৯৭ ঘর ভিলেজার রয়েছে। তারা অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে বনের পরিত্যক্ত জমিতে কৃষিকাজ করার শর্তে, বিনা পারিশ্রমিকে বনের প্রহরী হিসেবে ২৪ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া ভিলেজার মঈন উদ্দিনে অভিযোগ, মাসখানেক আগে কালেঙ্গা নতুন বাজারের উত্তরাংশে (একাশিয়া বাগান সংলগ্ন) আমাদের ভিলেজার হাজি বাহার মিয়ার দখলে থাকা প্রায় দেড় একর ধানি জমি সিপিজি-হিমালিয়া গ্রুপের সভাপতি সুরত আলী ও তার দল জোর করে দখলের চেষ্টা করে। বিষয়টি সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যায়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কালেঙ্গা বিটের সেগুনবন রক্ষায় ভিলেজারদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সিএমসি’র সদস্যরা বরং গাছ কাটা ও পাচারের সঙ্গে জড়িত।
এ অভিযোগের বিষয়ে রেমা-কালেঙ্গার কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির (সিএমসি) সহ-সভাপতি মো. আবদুল হাসেম বলেন, এটি আসলে ভিলেজার ও সিপিজি গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ফলে হয়েছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি বর্তমানে সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে ভিলেজারদের দখলে রয়েছে জায়গাটি।
সিএমসি’র সদস্যদের গাছ কাটা ও পাচারের বিষয়টি প্রতিবাদ করে আবদুল হাসেম বলেন, এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলা।
ক্রেলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেলের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কী কী কাজ করেছি বা করছি এগুলো বনের পাশ্ববর্তী গ্রামগুলো পরিদর্শন করলে বোঝা যাবে। সিএমসি ও সিপিজি গ্রুপ সার্বক্ষণিক বন রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বলেই রেমা-কালেঙ্গা এখনও দেশের বৃহত্তম বন।
আমরা সংরক্ষিত বনের আশেপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে কৃষি জমির যথার্থ ব্যবহারসহ মাছ চাষ ও গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভরশীল করার চেষ্টা করছি, যোগ করেন তিনি।
ক্রেল’র কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন আমাদের দেশের প্রতিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষের জীবন-জীবিকা। আমরা প্রতিবেশ ও রক্ষিত এলাকা সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষিত বনগুলোতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
বিবিবি/এসএস
** ভিলেজারদের পাহারায় টিকে রয়েছে বন
** সংসারের কথা মনে পড়লেই কান্না আসে
** নিরাপত্তাকর্মীরাই নিরাপত্তাহীনতায়
** ৩৩ জনের কাঁধে দেশের ২য় বৃহত্তম বন
** সৌরবিদ্যুতে আলোকিত বনাঞ্চল
** যে রাস্তায় অটোরিকশা হয়ে যায় সিন্দাবাদের জাহাজ!
** পাখির ডাকে রাত, পাখির ডাকে দিন
** বন্যপ্রাণীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অভয়াশ্রম
** পাহাড়ের ভাঁজে অরণ্যের দিনরাত্রি