ঢাকা: একটি ক্ষত-বিক্ষত তিন চাকার সাইকেল, গলে যাওয়া জমাটবাঁধা কিছু কয়েন, ছিন্নভিন্ন পোড়া শার্টের কয়েক টুকরো আরও অনেক কিছু। বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রামাণ্য নিদর্শন এগুলো, যা সংরক্ষিত হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে।
জাপানের হিরোশিমায় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট বিস্ফোরিত হয় প্রথম পারমাণবিক বোমা। সেই বোমার ভয়াবহতা দেশটি কাঁধে নিয়ে বেড়িয়েছে দীর্ঘদিন। এখনো রয়েছে কোনো না প্রতিক্রিয়া। এর ৭০ বছর পর হিরোশিমা দিবসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন ভয়াবহ সেই স্মৃতির ধারক ১০টি ছবি নিয়ে করেছে বিশেষ আয়োজন। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য থাকলো সেগুলো।
তিন চাকার সাইকেল
তিন বছর বয়সী শিশু শিনিচি তেতসুতানির প্রিয় সাইকেল এটি। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের ধ্বংসযজ্ঞে অবলীলায় প্রাণ হারায় শিনিচি। তার বাবা তাকে এই সাইকেলটি সহ কবর দেন। ১৯৯৫ সালে সেসময় বেঁচে যাওয়া তাতসুহারু কোদামা ‘শিন’স ট্রাইকেল’ নামে একটি শিশুতোষ বই ছাপেন। বইয়ে ব্যবহার করেন এ ছবিটি।
শার্লি টেম্পল ডল
চিকো সুয়েতোমোর বাবা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় তাকে এই পুতুলটি দিয়েছিলেন। বোমা বিস্ফোরণের কয়েকদিন বাদে যখন তিনি জাপানে তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে আসেন তখন দেখেন পুতুলটি মাটিতে পড়ে রয়েছে। পুতুলের পরনে হালকা পিচ রঙের জামাটি মলিন। আগাগোড়া হয়ে গেছে তামাটে। চিকো যুদ্ধের পর শার্লি টেম্পল ডলটি জাদুঘরে দিয়ে দেন।
লাঞ্চ বক্স
শিগেরু অরিম্যান ছিলেন সেকেন্ড হিরোশিমা পিফেকচারাল জুনিয়র হাই স্কুলের ছাত্র। বোমা হামলার কয়েকদিন পর তার মা তার মরদেহ খুঁজে পান। এই লাঞ্চ বক্সটি তার পেটের নিচে চাপা পড়ে ছিলো।
শার্ট
ঘটনার দিন শিগেজো কনো শহরের এক ইলেকট্রিক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। দু’দিন পর তার ভাই সেখানে গিয়ে দেখেন ছোট ভাই মৃত্যু ঘুমে শায়িত। ডেস্কের পাশে ছিন্ন ভিন্ন পরনের শার্ট। ভাইয়ের শার্টটি বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। শার্ট দেখে শিগেজোর স্ত্রীর বুঝতে বাকি ছিলো না যে তার স্বামী আর নেই। তোশি নিজের হাতে সেলাই করেছিলেন শার্টটি।
আর্মব্যান্ড বা বাহুবন্ধনী
১৩ বছর বয়সী হাই স্কুল ছাত্র তোশিয়াকি আসাহি ওইদিন এই বাহুবন্ধনী পরে কাজ করছিলো। মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও সে অাগুনের স্ফুলিঙ্গের মধ্যদিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে শহরের সীমান্ত পাড়ি দেয়। এরপর এক তার এক পরিচিত তাকে বাড়ি দিয়ে যান। তিনদিন পর সে তার মায়ের কোলেই চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ে। যাওয়ার আগে সে বলেছিল, তোমরা যা করেছ তার সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ।
স্টিল হেলমেট
শিক্ষক রায়ো ফুকুমরু দুর্ঘটনার সময় ছাত্রদের একটি কারখানায় পথ নির্দেশ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই বিস্ফোরণে তার শরীরের অধিকাংশ জায়গাই পুড়ে যায়। শুধু এই হেলমেট থাকায় বেঁচে যায় মাথাটা। পরে কোনোভাবে তার স্কুলে ফিরে যান। দু’দিন পর তাকে স্ট্রেচারে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বীভৎসভাবে পুড়ে যাওয়ায় তার স্বজনরা তাকে চিনতে পারেননি। দীর্ঘ ছয় মাস সময় লাগে তার সুস্থ হতে। সুস্থ হওয়ার পর তার শরীরে থেকে যায় পোড়া ক্ষতের দাগ। তবে তিনি পুনরায় তার কাজে ফিরে যেতে পেরেছিলেন।
স্কুল ব্যাগ
মিতসুকো কাওয়ামুরা ছিলো হাইস্কুলের ছাত্রী। মাত্র ১৩ বছর বয়স ছিলো তার। বোন ইয়ায়কো শহরে হেঁটে হেঁটে নিখোঁজ মিতসুকোকে খুঁজছিলেন। কিন্তু তাকে বা তার মরদেহ খুঁজে না পেলেও একমাস পর মিতসুকোর স্কুলব্যাগটি পাওয়া যায়। সেদিন মিতসুকো যেখানে কাজ করছিলো সেখানেই পড়ে ছিলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া এ ব্যাগটি।
স্যুটকেস
তাদায়রি কিহারা ব্রিজের ওপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। স্যুটকেসটি ছিলো তার সাইকেলের পেছনে বাঁধা। বোমা বিস্ফোরণ তাকে ব্রিজের ফুটপাতের ওপর ফেলে দেয়। শরীরের পেছনের অংশ বাহু এমনভাবে পুড়ে যায় যে বেশিরভাগ চামড়াই উঠে গিয়েছিলো। আগুনের তাপে স্যুটকেসটিও ছিঁড়ে ফুঁড়ে একাকার। কিহারা ঘটনার পর আরও ২২ বছর বেঁচেছিলেন। পরে তিনি স্যুটকেসটি জাদুঘরে দিয়ে দেন।
ওয়ালেট
বোমা বিস্ফোরণের পরপরই শুকুশি নিশিমুরা তার কাজের জায়গা থেকে নিখোঁজ হন। ঘটনার দু’সপ্তাহ পর তার দেহাবশেষ ও এই ওয়ালেটটি তার বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
গলিত কয়েন
ঘটনার এক সপ্তাহ পর কিঞ্জো ইমুরা তার আত্মীয়ের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ভেতর এই গলিত কয়েনের গুচ্ছটি পান। ইমুরা এই কয়েনের গুচ্ছটি তার ভাগ্নে ক্যাজুহিকো নিনোমিয়াকে হস্তান্তর করেন। জাদুঘরে অনুদানের আগ পর্যন্ত তিনি এগুলো সংরক্ষণ করেছিলেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
এএ/