ঝালকাঠি থেকে ফিরে: দেশের লাখো মানুষ প্রতিদিন যাতায়াতে ওঠেন রিকশায়। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, পুরো বাংলাদেশেই।
রং তুলি দিয়ে এঁকে বিষয়বস্তু যতটা রঙিন হয়, জীবন ততটা রঙিন নয়। হয় না বলেই জীবন মানে সংগ্রাম, রংহীন ধূসরে পড়ে থাকা। কিন্তু থেমে থাকা নয়, জানালেন তিনি। এর মধ্যেই জীবন চলমান।
পাথরকাটা মানবের মতো দেখতে! তা আবার কেমন হয়! কালো পাথরের মতো মুখ-বাহু-হাত, শরীরে সামর্থ্য অনেক। দেখেই তা অনুমেয়। জীবনে থেমে থাকেননি কখনও। তাই তো কর্মক্ষেত্রে কাজের মধ্যে ডুবে শোনালেন- ‘রিকশায় রং করেই মেয়েকে ডাক্তার বানাবো, এটাই একমাত্র স্বপ্ন আমার’।
হুট করে তার মুখ থেকে সে বাক্য শুনে অবাক হলাম। এনার্জি লাইটের আলো আর মেঘলা আকাশে বাতাসের লেশমাত্র ছিল না। সময়টা রাত। জেলা শহরে সে রাত অনেকই বলা যায়। প্রিয় মেয়ের নামে দোকান- জিন্নাত সাইকেল স্টোর। কৃষ্ণকাঠি রোডে। কিন্তু তখন কাজ চলছিল জাহাঙ্গীর সাইকেল স্টোরে। কন্ট্রাক্ট নিয়েছিলেন, পুরা করছেন কাজ।
দেশব্যাপী খেটে খাওয়া মানুষের একজন প্রতিনিধি বলা যায় তাকে। ছিলেন আরবের অন্যতম ধনী দেশ দুবাইয়ে। ২০১১ সালে যান; আবার ফিরেও আসেন দ্রুত। ২০১৩ সালে। সেখানে কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন বাগান মালির। তবে স্থির হয়নি কর্মক্ষেত্র। কাঠ কাটা, রাজমিস্ত্রির কাজও করতে হয়েছে। মন বসেনি কোনোটাতেই।
বাংলানিউজকে বললেন- অন্যের কথা শুনতে আর খারাপ আচরণ সহে টাকা ইনকাম আমার দ্বারা হবে না। বাংলায় গাল-মন্দ শোনাও ঢের ভালো কিন্তু পরিবার-পরিজন ফেলে বিদেশ গিয়ে অবহেলা আর তাদের নাক সিঁটকানো আচরণে হৃদয় ফেটে যায়। ফিরে আসি তাই, দেশেই আনন্দ। গায়ে শক্তি আছে, খেটে খাবো।
বিষয়টি প্রত্যেকেরই ভেবে দেখার অনুরোধও জানান তিনি। পরিবারে স্ত্রী হেলেনা বেগম আর একমাত্র আদরের মেয়ে শায়েলা আক্তার জিন্নাত। বাসা গুরুধাম এলাকায়। নিজস্ব কিছু জমিও রয়েছে উপজেলা রাজাপুরে। ফল-ফলাদি হয়। মেয়ে জিন্নাত স্থানীয় সুগন্ধা স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। খুবই ভালো পড়াশোনায়। মনোযোগও দারুণ।
বললেন- আমার ভবিষ্যত হলো মেয়ে। তার জন্যই সব। দোকানে বিভিন্ন খরচ বাদে মাসিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়। রিকশা সাইকেল বানাই, রং করি। প্রতিটি বানাতে খরচ ১৮ হাজার আর মজুরি ১৬শ’। এছাড়া সুযোগ পেলে বিভিন্ন ব্যানার, সাইবোর্ডেও আঁকি। সার্বিকভাবে ভালোও না, খারাপও না। জিদ একটাই- আমি জীবনে কিছুই পাইনি। ক্লাস ফোর-ফাইভের পর হয়নি আর পড়াশোনাও। এখন কেবলই চাই মেয়েটা অনেক বড় ডাক্তার হোক।
রিকশা বানান, সঙ্গে রঙেও পারদর্শী। এলাকায় তার একটা নামডাক আছে। ‘মেকার’ বলে। রিকশা, সাইকেল সারানো-বানানো সবই করেন নিপুণ হাতে। তাই এ ধরনের একটি নাম জুটেছে। নাম পেয়ে বেশ খুশিই তিনি। যে কাউকে পুলকিত করে ফেলার মতো গুণ তার! রংতুলি হাতে যে কাণ্ড ঘটান তিনি, তাতে কে বলবে আঁকিয়ে পণ্ডিত নন!
বাংলানিউজকে তিনি আরও বলেন, আমার পুরো নাম জাহিদুল ইসলাম (৪৬)। ঝালকাঠি জেলাতেই আদিবাস। লোকে ‘জাহিদ মেকার’ বলে ডাকেন। তাতে কিছুই আসে যায় না। ইচ্ছা-স্বপ্ন-আশা-প্রত্যাশা যাই বলেন না কেন তা একটাই; মেকারের মেয়ে হবে ডাক্তার...।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
আইএ/এএ
** গাবখান ব্রিজে খোশগল্প
** দিঘিতে পা ভেজানোর আনন্দ...
** ২ লাখের শ্রম-ঘামে অন্যতম মসজিদ উজিরপুরে
** বেদে পল্লী: ১৫ পরিবারে ২ বেড়ার টয়লেট
** এই শিশুদের ভবিষ্যৎ সাপ!
** প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ
** যেখানে হারায় না শৈশব
** তিন মাস চা বিক্রেতা, নয় মাস মজুর
** ‘আমড়া বন্ধনে’ সম্ভাবনা বিশ্ব ছোঁয়ার
** জ্যাম-জেলি, পেয়ারা ও ভাসমান হাটে আগ্রহ
** রাস্তায় ইট বিছিয়ে ব্যবসা
** ঢাকায় কেজি ৪০, এখানে মণ ৪০!
** এই পেয়ারার স্বাদই আলাদা!
** নৌকায় ভাসা বিশাল বাজার...
** থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম নয় ‘ভীমরুলী’