ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

এক সময় ‘শিউলি ফুলের’ বোটা দিয়ে খাবার রাঙানো হতো 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২২
এক সময় ‘শিউলি ফুলের’ বোটা দিয়ে খাবার রাঙানো হতো  মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে শিউলি ফুলের দল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: বাজারের হরেক রকম খাবারে কত রকমের ভেজাল মেশানোর কথা আমাদের মগজে গেঁথে রয়েছে। কেউ কেউ সেসব খাবারের কথা শুনেই চমকে উঠেন! বরং বাজারের খাবার না খেয়েই তিনি দিব্যি সুস্থ আছেন, আছেন সুরক্ষিত।

বাজারের অনিরাপদ খাবার খেয়ে চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি ডাক্তার আর ফার্মেসির পেছনে খরচ হয়ে যাবে বহুগুণ টাকা।    

শুনে কিছুটা চমকে উঠারই কথা যে, এক সময় শিউলি ফুলের বোটা দই বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু তারপরও ওটা খুবই প্রাকৃতিক জিনিস। তাতে নেই ভেজাল বা শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির লেশমাত্র ভাগ।  

বলতে দ্বিধা নেই, ভেজাল বা অনিরাপদ খাবার অপেক্ষা এই প্রাকৃতিক জিনিসগুলোর সংমিশ্রণ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়।  

‘শিউলি’ ফুলের আরেক নাম ‘শেফালি’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis। সুগন্ধি জাতীয় এ ফুলে রয়েছে ৫ থেকে সাতটি সাদা বৃতি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মতো বৃন্ত। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। এ ফুল রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশিরভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব মোহনীয় আবহ তৈরি করে।

শরৎ আর হেমন্তের প্রাকৃতিক প্রতীক শিউলি। শিউলি ভোরের আলো সহ্য করতে পারে না। ভোরের সূর্য আলো ছড়াবার আগেই ফুলগুলো গাছ থেকে ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ে থাকে। মাথা তুলে গাছে লেগে থাকা ফুলগুলোকে খোঁজার চেষ্টা করা হলে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিছুতেই দেখা যায় না।  

প্রত্যেক বাঙালির কাছে শিউলি, কাশফুল আর শরৎকালের একটা আলাদাই গুরুত্ব আছে। কারণ, সর্বপ্রথম এরাই জানান দেয় শারদীয় দুর্গোৎসবের। বলাই বাহুল্য, শিউলি ও কাশফুল ছাড়া শরৎ যেমন নিষ্প্রাণ, তেমনি শারদীয় উৎসবও অনেকটাই অসম্পূর্ণ। শরৎ ও হেমন্তকালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে। শিউলির আরেক নাম পারিজাত! হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে অনেকবার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাত এর কথা।

আমাদের বাংলা সাহিত্যেও স্থান দখল করে রয়েছে শিউলি। মহাকবি কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল এবং বিভূতিভূষণ থেকে শুরু করে অগণন কবি-সাহিত্যিকরা শিউলি ফুলকে নানা রঙের নানা বর্ণমালায় তুলে ধরেছেন।

এছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় শিউলি ফুলের মালা নারীদের খোঁপায় পৌঁছে গিয়ে তাদের সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে।    

জানা গেছে, এখন বিভিন্ন নার্সারিতে বারোমাসি শিউলি ফুলের গাছ পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্পপ্রেমীরা বারোমাসি শিউলি ফুলের সৌন্দর্য এখন থেকে উপভোগ করতে পারবেন। শিউলি সাধারণত ডাল কেটে, গুটি কলম থেকে, শিকড় থেকে এবং বীজ থেকে চারা এই চারভাবেই করা যায়।

প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘তরুপল্লব’র সাধারণ সম্পাদক এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন শিউলি ফুল সম্পর্কে বলেন, বেশির ভাগ সাদা রঙে ফুল রাতে ফুটে। কিছু কিছু গাছে থাকে, কিছু কিছু মাটিতে ঝরে যায়। তো শিউলি হলো ভোরে ঝরে যায়।  

খাদ্যে ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের দিনে শিউলি বোটার রং দিয়ে আগে দই রাঙানো হতো। প্রাকৃতিক রং হিসেবে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহারের প্রচলন ছিল। লক্ষ্য করলে দেখবেন, শিউলি ফুলের বোটায় এক প্রকারের হলদে রং আছে, এই রংটা আগে স্বাভাবিকভাবে মিষ্টান্ন জাতীয় বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করে খাবারের বাহ্যিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হতো।

সুগন্ধি ফুল শিউলির জন্মস্থান বাংলাদেশ এবং ভারত। গ্রামে এবং কিছু কিছু এলাকায় এখনও এ ফুলটি দুর্লভ হয়ে উঠেনি। শিউলি ফুল সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে ফুটতে শুরু করে আবার সূর্য ওঠার আগেই ঝরে পড়ে গাছতলায়। শিউলি ফুল গাছটির আয়ু সীমিত সময়ের। শিউলির পাতা ও বাকল বিভিন্ন রোগের মহৌষধ বলে জানান মোকারম হোসেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।