এই ব্রাজিলকে দেখতেই সারারাত ঘুমায়নি বাংলাদেশের মানুষ। রাত জেগে ছিল এশিয়ার সব দেশ।
সবই যেন পুষিয়ে দিয়েছে ব্রাজিল, চিরচেনা ব্রাজিলের মতো খেলে; ক্যামেরুনকে ৪-১ এ উড়িয়ে দিয়ে।
পুরো দল দারুন খেললেও হিরো আবারও নেইমার। এক খেলোয়াড়ের এক ধাক্কার জবাব দিতে গিয়ে এত বড় ধাক্কা দিলেন তিনি দল ক্যামেরুনকে যে, তারা তো বড় ব্যবধানে হারলোই, ব্রাজিলও টেনশন-ফ্রি পৌঁছে গেল পরের রাউন্ডে।
খেলা তখন ১৫ মিনিটও হয়নি। ক্যামেরুনের এক দশাসই ডিফেন্ডার এমন বিশ্রীভাবে নেইমারকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলেন যে, প্রায় উড়তে উড়তে তিনি গিয়ে আছড়ে পড়লেন দূরে বসা ক্যামেরাম্যানদের কাছে। এমন অসভ্য আচরণের জন্য লালকার্ড তো দূরে থাক, হলুদ কার্ডও দেখতে হলো না দোষী খেলোয়াড়কে!
অথচ মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে উঠে এসেই দোষী খেলোয়াড়কে শায়েস্তা করার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন নেইমার। গোল করে বসলেন এক মিনিট যেতে না যেতেই! একই সঙ্গে ব্রাজিলের শততম বিশ্বকাপ ম্যাচে শততম গোলটা করার সুবাদে ইতিহাসেও ঢুকে গেলেন সারা দুনিয়ায় বেশুমার জনপ্রিয় এই তরুণ।
১০ মিনিটের মধ্যে সেই গোল ফিরিয়ে দিয়ে ক্যামেরুনের জোয়েল মাতিপ কিছুটা নার্ভাসও করে ফেলেছিলেন ব্রাজিলকে। কিন্তু ব্রাজিলের ডিফেন্স লাইনে যেমন ফাঁকফোকর চিরাচরিত ব্যাপার, ফরোয়ার্ড লাইনেও প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার মতো বিশ্বসেরা স্ট্রাইকাররাও উপস্থিত যুগে যুগে।
পেলে থেকে শুরু করে রোমারিও, রোনালদো হয়ে আজকের নেইমার তো ব্রাজিলেরই খেলোয়াড়। আর নেইমার যেহেতু বর্তমান, নিজ দলের ডিফেন্সের ভুলটা শোধরানোর দায়িত্বও পড়ে গেল তার কাঁধেই। দেখতে দেখতে করেও ফেললেন গোল। ৩৫ মিনিটে, অনেকটা একক প্রচেষ্টায়। ডান পায়ের শটে একেবারে ক্লিনিক্যাল ফিনিশ!
তবু প্রথমার্ধের এমনকি দ্বিতীয়ার্ধের কিছুটা সময় এমনভাবে গুছিয়ে আর চড়াও হয়ে খেলছিল ক্যামেরুন যে, মনেই হচ্ছিল না তারা আন্ডারডগ। বিশেষ করে প্রায় পুরো খেলায় যেভাবে রাফ চার্জ আর শারীরিক চ্যালেঞ্জ করছিল, তারা তাতে মনে হচ্ছিল খেলাটা তাদের দেশেই হচ্ছে, ব্রাজিলে নয়!
কিন্তু, শুধু গায়ের জোরে তো আর ম্যাচ জেতা যায় না। জিততে হলে চাই স্কিল, টেকনিক, গেইমপ্ল্যান, অভিজ্ঞতা- এমনি আরো কিছু। ব্রাজিলের খেলায় যা ছিল পুরোপুরিই। প্রথমার্ধের ২-১-কে দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রেড আর ফারনান্দিনিও গোল করেন ৪-১ বানিয়ে দিলে ব্রাজিল তো সহজেই পৌঁছে যায় রাউন্ড সিক্সটিনে এবং তা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে; যেখানে তাদের মুখোমুখি হবে না 'ডেঞ্জারাস' নেদারল্যান্ডস। নকআউটে চিলিকে পেয়ে ব্রাজিল মহাখুশি কিনা জানি না, তবে খুশি, বাজি ধরে বলতে পারি।
আমাদের সিনেমায় যেমন শেষ দৃশ্যে নায়ক না থাকলে বেখাপ্পা লাগে, তেমনই হলো ব্রাজিল-ক্যামেরুনের খেলায়। খেলার নায়ক নেইমার নিজেকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নিলেন খেলা শেষের ২০ মিনিট আগেই। আরেকটা হলুদ কার্ড পাওয়া আর ইঞ্জুরির সম্ভাবনা থেকে বাঁচার জন্য। তা না হলে আরো একটা গোল পাওয়াও যেতে পারতো তার কাছ থেকে।
আমি যদি নেইমার হতাম, এই কথার ওপর বলে দিতাম- "তিন খেলায় চার গোল করলাম, তাও আবার বিশ্বকাপে... আরও...!!"
বাংলাদেশের আধুনিক স্পোর্টস সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মনে করা হয় তাকে। বর্তমানে কানাডার মন্ট্রিয়লে থাকেন। তবে এখনও স্পোর্টস এবং লেখালেখি তার হ্রদস্পন্দনের সাথেই যেনো মিশে আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আয়োজনে ফরহাদ টিটো লিখছেন বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪