চট্টগ্রাম: লিগে শেখ রাসেলকে আর চেনা যাচ্ছে না বলে যে গুঞ্জন উঠেছে তার মূলে রয়েছে বাজে রেফারিং। বাজে রেফারিং এর জন্যই শক্তিশালী দলটি দুর্দান্ত পারফর্ম করেও ম্যাচে বারবার হেরে যাচ্ছে।
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মাঠে নামে দুই দল। ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনালিস্ট শেখ রাসেল এ ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে হেরেছে ২-১ গোলের ব্যবধানে। সঙ্গে ছিল বাজে রেফারিংয়ের পুরোনো গল্প।
মাত্র তিন ম্যাচ শেষেই এবারের লিগের হিসেব কষতে হচ্ছে বিগ বাজেটের দল শেখ রাসেলকে। বাজে রেফারিং নিয়ে দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে অসন্তোষ। নিজেদের প্রথম ম্যাচ সামর্থ্য অনুযায়ী খেলা হয়নি বলে কোচ-খেলোয়াড়রা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন। আর দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ছন্দে ফিরেও ম্যাচ জিতে বেরিয়ে আসতে পারেনি অনেকগুলো সহজ সুযোগ নষ্ট করায়। সঙ্গে ছিল আগের দুটি ম্যাচের বাজে রেফারিংয়ের অভিযোগ। তবে কি রেফারিরাই হারিয়ে দিচ্ছে একটি শক্তিশালী দলকে?
এই ম্যাচে নামার আগে চলতি মৌসুমে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল শেখ রাসেল ও চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে, মাঠের খেলায় কেউই কাউকে হারাতে পারেনি। এ ম্যাচে এসে জয়ের পাল্লা নিজেদের দিকে ভারী করে নিলো চট্টগ্রাম আবাহনী।
একটি দল হিসেবে খেলেও কেন বারবার হেরে যাচ্ছে শেখ রাসেল-এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এক সিনিয়র খেলোয়াড় জানান, প্রথম ম্যাচে মিশুর একটি পেনাল্টি দেয়নি রেফারি। এরপর থ্রু পাসে পল গোল করলেও রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজায়। একবার তো প্রতিপক্ষের একজনের হাতেই বল লাগলো, সেটিও এড়িয়ে যান রেফারি। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের একাধিক খেলোয়াড়কে পেছন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, অথচ রেফারির ভাষ্য ছিল আমরা নাকি অভিনয় করে মাঠে পড়ে গেছি।
সোমবার (০১ আগস্ট) শেখ রাসেল-চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রমান। আর তার সহকারী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সুজিত চন্দ্র এবং শাহ আলম।
চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা কাটিয়ে মাঠে নামে শেখ রাসেল। প্রথম দিকে ম্যাচের ছন্দ হারিয়ে গোল হজম করলেও পরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে দলটি। ম্যাচের ১৯তম মিনিটে রাসেলের একটি আক্রমণ বাধাপ্রাপ্ত হয় অফ সাইডের ফাঁদে পড়ে। ২২তম মিনিটে মাঠের সাইড লাইনের বাইরে বল চলে গেলেও রেফারি থ্রোয়িংয়ের বাঁশি বাজাননি। অবশেষে সাইড লাইনে থাকা সহকারী (লাইন্সম্যান) মাঠের রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
৩২ মিনিটের মাথায় স্বাগতিক ডিফেন্ডার রেজাউল করিম আঘাত পেলে নিজেদের ডি-বক্সে শুয়ে পড়েন। প্রথমদিকে বিষয়টিতে পাত্তা না দিলেও পড়ে রেফারি মিজানুর সেচ্ছাসেবক দলকে মাঠে ঢোকার অনুমতি দেন। এ সময় মাঠের দর্শকদের মনেও রেফারির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। পরে মাঠের বাইরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায় রেজাউলকে। তার বদলি হিসেবে আরেক ডিফেন্ডার মাঠে নামেন।
দ্বিতীয়ার্ধেও দেখা মেলে রেফারির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠার মতো কিছু ঘটনা। ৫৭ মিনিটে শেখ রাসেলের সোহেল রানার জার্সি ধরে টানলেও ফাউল ধরেননি রেফারি মিজানুর। লাইন্সম্যানের সঙ্গে খেলোয়াড়দের এ নিয়ে বাকবিতন্ডা বাধতেও দেখা যায়। মাঠেই জড়ো হন দুই দলের খেলোয়াড়রা।
৮১ মিনিটের মাথায় দেখা বাজে রেফারিংয়ের আরেকটি ঘটনা। শেখ রাসেলের বিপক্ষে ফাউলের নির্দেশনা সঠিকভাবে দিলেও রেফারির পরবর্তী নির্দেশ উপেক্ষা করেই চট্টগ্রাম আবাহনী খেলা শুরু করে দেয়। তখন পর্যন্ত রাসেলের ফুটবলাররা নিজেদের মার্কে ফেরেননি। তাতেও যেন রেফারির কিছুই আসে যায় নি!
৮৯ মিনিটের মাথায় স্বাগতিকদের জয়সূচক গোলটি করেন লিওনেল। শেখ রাসেলের ডি-বক্সে একেবারে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন লিওনেল। অথচ অফসাইটের বাঁশি বাজাননি রেফারি। রাসেলের ডিফেন্ডাররা নিশ্চিত অফসাইট ভেবে লিওনেলকে বাধাও দেননি। ততক্ষণে যে সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে শেখ রাসেলেরই।
এমন কিছু বাজে ঘটনার জন্ম দিয়ে এভাবেই ম্যাচটি শেষ করেন রেফারি ও লাইন্সম্যানরা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ০১ আগস্ট ২০১৬
এমআরপি