দেশের নারী ফুটবলের মহাকাব্যের পাতায় অদম্য ফুটবলার হিসেবে তহুরা নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে আনন্দের হিল্লোলে ভাসিয়েছে নারী ফুটবলের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের সীমান্তঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামকে।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে তহুরা খাতুনের হ্যাটট্রিক নৈপুণ্যে সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ৬-০ গোলে তারা উড়িয়ে দিয়েছে হিমালয় কন্যাদের।
এদিন সন্ধ্যায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ হয় তহুরা খাতুনের বাবা দরিদ্র কৃষক মো. ফিরোজ মিয়া’র। উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ‘মাইয়্যাডার (মেয়েটার) খেলা দেখবার পাইছি না। মাঠ থেকে ধান এনে মাড়াইয়ের কাজ করছিলাম। আমার ছোট্ট ছেলে সোহাগ জানালো তহুরা নেপালরে একাই ৩ গোল দিছে। এইটা যে কতো আনন্দের তা বুঝাইমু ক্যামনে?’
অসাধারণ কৃতিত্বের পরেও বাবার সঙ্গে কথা হয়নি তহুরার। তবে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বাবাকে ফোন করে দোয়া চেয়েছিলেন তিনি। সেদিন মেয়ের কথাবার্তা ছিল ঠিক এমন- ‘বাবা কালকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলা। নেপালকে যেন হারাতে পারি, এ দোয়া কইরো। আমি দলের জন্য অনেক ভাল খেলতে চাই। নিজের সেরাটা উপহার দিয়ে দলকে জেতাতে চাই। ’
কলসিন্দুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তহুরা তৃতীয়। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের দৌলতেই তহুরা হয়ে উঠেছেন দেশের নারী ফুটবল দলের অপরিহার্য এক খেলোয়াড়। তাকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দল।
তহুরার ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম সোহাগ কলসিন্দুর কওমী মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘ময়মনসিংহ থেকে চাচা ফোন করেছে, বলেছে তহুরা হ্যাটট্রিক করেছে। গ্রামের সবাই টেলিভিশনের খবরের হেডলাইনে তহুরার কৃতিত্বের কথা জেনেছে। আমার বোন দেশকে জিতিয়েছে। সবাই আমাদের বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বাবা-মা সবাই অনেক খুশি। ’
তহুরার চাচা সাংবাদিক মতিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘টিভিতে তহুরার নিপুণ ফুটবলশৈলী দেখেছি। দিনে দিনে তহুরা দেশের অপরিহার্য ফুটবলার হয়ে উঠেছে। ওর প্রতিটি গোল ছিল উপভোগ্য। ওদের সাফল্যে কলসিন্দুরের ঘরে ঘরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এমএএএম/এইচএ/