‘ইটস কেম ফ্রম দ্য হেভেন’ কোথাও কেউ বলেছিলেন কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও। দম আটকে নরকে পৌঁছে যাওয়ার অনুভূতির পর যা আসে- স্বর্গই তো মনে হয় তা।
যখন দমবন্ধ হয়ে যাওয়া নরকে পৌঁছে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। ছন্নছাড়া ফুটবলে যেদিন আধঘণ্টায় প্রতিপক্ষের ডি বক্সে পা ছুয়াতে পারেননি কোনো আর্জেন্টাইন। যে সময়ে সমীকরণ এমন, হেরে গেলে বেজে যাবে বিদায় ঘণ্টা। তখন গোল করেন এমন একজন, যাকে রেখে গেছেন স্বর্গে থাকা কেউ।
কে? দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা অবশ্যই। এমন কিছু আকাশী-সাদা জার্সিতে তিনি ছাড়া আসতে পারে একজনের পা থেকেই- লিওনেল মেসি। বাঁ পায়ের জাদু তাকে নিয়ে কতবারই বলা হয়েছে- তবে এই গোল তেমন কিছু নয় অবশ্যই।
এই গোল স্বর্গ থেকে আসা। এই শট ছুয়ে ফেলে সেখানে থাকা ‘ঈশ্বরকে’। ম্যারাডোনা বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে করেছিলেন ৮ গোল, লিওনেল মেসিও করলেন তাই। গ্যালারিতে বুক চাপড়ে ধরা কারো দিকে না ক্যামেরার ল্যান্স না গেলেও বুঝতে বাকি থাকে না, এই গোল তার কাছ থেকেই আসা।
স্বপ্নের সমাধির ওপর দাঁড়িয়ে মহাকাব্য রচনা করতে তো এর আগে একজন আলবিসেলেস্তেকেই দেখা গেছে। স্বপ্ন দেখাতেন যিনি শূন্য থেকে- এই গোল আসা তার কাছ থেকেই। বক্সের ভেতর ঢুকতে পুরোটা সময় ধরে হিমশিম খেয়েছে আর্জেন্টিনা। বন্দি হয়ে পড়েছে হেরার্ড তাতা মার্তিনোর বাধা ছকে।
তবে তিনিও নিশ্চয়ই জানতেন, লোহার শেকল ভেঙে ফুটবল পায়ে বেড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে মাঠের একজনের। আরো একবার তিনি করলেন তাই। দি মারিয়ার কাছ থেকে বল পেলেন, কাড়িকুড়ি করলেন কিছু একটা। ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি শট করলেন ২৫ গজ বাইরে থেকে। গোল! গোল!
ফুটবল কি জীবন? দি মারিয়ার মতো কয়লায় কালো হয়ে যাওয়া সাদা দেয়ালের ঘরে বেড়ে উঠেন যারা; যাদের ফুটবলার বানাতে মা সাড়ে নয় কিলোমিটার সাইকেল চালান প্রতিদিন-তাদের জন্য অবশ্যই। ফুটবলেই তাদের জীবনকে খুঁজে নিতে হয় বরাবর। স্বর্গের উপহার চড়ে এলো তার থেকে- যেন এমনই হওয়ার কথা ছিল, এভাবেই আসার কথা ছিল উদ্ধার কর্তার।
দি মারিয়া চিৎকার করেন গোলের পর, তার চোখ বেয়ে পড়তে চায় জল। কে জানে, তার ছোট্টবেলায় কোচের বলা ‘তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’ কথাটাকে মনে পড়ে কি না। কাঁদেন হয়তো লিওনেল মেসিও।
বার্সেলোনায় বেড়ে উঠা আর্জেন্টিনার ছেলেটির জন্যও ফুটবলই জীবন। যার জন্য সতীর্থরা ‘জীবন দিয়ে দেবেন’ বলে আসেন বিশ্বকাপে, তিনি বাদ পড়ে যাবেন গ্রুপ পর্ব থেকেই!
ঈশ্বর হতে দেননি তা। ক্ষুদে জাদুকর নামে যাকে পাঠিয়েছেন, তাকেই আরও একবার নায়ক বানিয়ে দিয়ে গেছেন অবলীলায়। গৌধূলী বেলায় আঁধার নেমে আসার ভয় থাকে। মাঝেমধ্যে থাকে রংধনু দেখার গভীর আনন্দও। লুসাইল স্টেডিয়ামে মেক্সিকোর বক্সের ২৫ গজ দূরত্বে তেমন কিছুরই দেখা মিলেছিল আজ!
হা ভানিদো দেল চিয়েলো। বাক্যটি স্প্যানিশ, মেসির মাতৃভাষা। অর্থ? স্বর্গ থেকে আসা। মেসির গোল অবিকল তেমনই।
বাংলাদেশ সময় :
এমএইচবি