ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

শেষ পর্ব

কোলন ক্যান্সার: প্রয়োজন সচেতনতা

ডাঃ মালিহা শিফা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১২
কোলন ক্যান্সার: প্রয়োজন সচেতনতা

ঢাকা: মলাশয়ের ক্যান্সার হচ্ছে এক ধরনের ক্যান্সার যা দেহের মলাশয়, মলনালী  (বৃহদান্ত্রের অংশ) বা অ্যাপেন্ডিক্সে অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয়। এটি কোলন ক্যান্সার (colon cancer), বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার বা অন্ত্রের ক্যান্সার (bowel cancer) নামেও পরিচিত।

বিশ্বজুড়ে যত রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়, তার মধ্যে আক্রান্তের হিসেবে তৃতীয় বৃহত্তম হলো কোলোরেক্টাল ক্যান্সার।

সাধারণত অন্ত্রের পার্শ্বদেশে সংক্রমণের মাধ্যমে এই ক্যান্সারের সূচনা ঘটে, এবং যদি এটি চিকিৎসাহীন অবস্থায় রেখে দেওয়া হয় তবে এটি ক্রমান্বয়ে অন্ত্রের পেশীস্তরের নিচে এবং সবশেষে অন্ত্রের প্রাচীরের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে কার্যকরভাবে এই ক্যান্সারের সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব আর সেজন্য ৫০ বছর বয়স থেকে ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিতভাবে স্ক্রিনিং চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়। অন্ত্রের এই ক্যান্সার সাধারণত সিগময়েডোস্কোপি বা কোলোনোস্কোপি প্রক্রিয়ায় নির্ণয় করা হয়।

আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সার কেন ভয়ের কারণ

•    আমাদের দেশে পায়ুপথের সমস্যা যেমন পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, পায়ুপথে কোনো বৃদ্ধি বা গ্রোথ ইত্যাদি হলে প্রায় সবাই এটিকে গোপন রাখতে চায়। ফলে সংকোচ, লজ্জা ও দ্বিধায় থেকে পরিবারের কাউকে এটি সে জানায় না, চিকিৎসাও করে না।

•    পায়ুপথে যে কোনো সমস্যা হলেই পাইলস বলে মনে করে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে `অর্শ-ভগন্দর-পাইলস` ইত্যাদি কবিরাজি চিকিৎসালয়ের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অর্থ, সময় ইত্যাদি নষ্ট করে।

•    বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের জন্য কোনো রুটিন চেকআপ করা হয় না। বংশে কারো কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলেও অনেকে এ ব্যাপারে মোটেই সচেতন নন। আবার দেশের অনেক স্থানেই এখনও কোলনস্কোপি ও জেনেটিক টেস্টের সুবিধা নেই।

•    বাংলাদেশে ধূমপান, তামাক, বিড়ি ইত্যাদি সেবনকারী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এর ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন
জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে:

১. যদি মল ত্যাগের ক্ষেত্রে আপনার মলনালী কিংবা মলাশয়ের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন।
২. যদি মলনালী দিয়ে রক্তপাত হয়, কিংবা যদি মলে রক্ত দেখতে পান কিংবা মল আলকাতরার মতো কালো ও আঠালো হয় (ভেবে বসবেন না যে এটা কেবলই অর্শরোগের লক্ষণ)।
৩. যদি আপনি ক্রমাগতভাবে উদরে ব্যথা অনুভব করেন কিংবা আপনার ওজন কমে যায় কিংবা আপনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে ওঠেন। এগুলোর পেছনে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, তবে যে কারণই থাক না কেন জরুরী ভিত্তিতে এগুলোর চিকিৎসা বা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যাতে করে ক্যান্সার বাসা বাধার সুযোগটাই না পায়।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন

১. সজীব ফলমূল এবং শাক-সব্জি বেশি করে খাবেন। দিনে কমপক্ষে পাঁচবার (বিশেষত ফুলকপি, বাঁধাকপি কিংবা ব্রকলি ইত্যাদি) এ ধরণের খাদ্য গ্রহণ করবেন।
২. গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির রান ইত্যাদি এবং প্রাণীজ চর্বি আহার থেকে বিরত থাকবেন। শুকনো শিমের বিচি, বাদাম এবং সয়াবিনের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
৩. মাছ এবং মাংস বেশি সেদ্ধ করবেন না এবং সেগুলো ঝলসে খাওয়া বা কাবাব বানিয়ে খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন।
৪. আশ জাতীয় খাবার খাওয়া বাড়িয়ে দিন। ভুষি কিংবা গমের দানা দিয়ে সকালের নাস্তা শুরু করুন। প্রথম দিকে এক টেবিলচামচ দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে তিন কিংবা চার টেবিলচামচ পরিমাণ আহার করতে পারলে ভালো হবে।

চিকিৎসা:
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে এটি কোন স্টেজে আছে তার ওপর। কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অপারেশনই কার্যকরী চিকিৎসা। তবে কখনও বাইপাস বা প্যালিয়েটিভ বা ফিকাল ডাইভারশনের কারণেও সার্জারিও করা হয়। অপারেশনের আগে বা পরে অথবা উভয় ক্ষেত্রেই কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।

কোলন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যে ধরনের মলাশয়ের ক্যান্সার শুধুমাত্র অন্ত্রের প্রাচীরে সংক্রমিত হয়েছে তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রতিকার করা সম্ভব। কিন্তু যেগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত হয়েছে তা সাধারণত প্রতিকার করা সম্ভব নয় এবং সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপির সাহায্যে আক্রান্ত রোগীর ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানোসহ জীবনের মানবৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়।

মলাশয়ের ক্যান্সার বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ক্যান্সারগুলোর মধ্যে চতুর্থ এবং মূলত উন্নত দেশগুলোতেই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যায়। মোট সংক্রমণের শতকার ৬০ ভাগই উন্নত বিশ্বে সংঘটিত হয়। ধারণা করা হয় ২০০৮ সালে বিশ্বের প্রায় ১২.৩ লক্ষ মানুষের দেহে মলাশয়ের ক্যান্সার সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছিলো যাদের ভেতর প্রায় ৬.০৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

তাই পাঠক এখন থেকেই সতর্ক থাকবেন। লজ্জা কিংবা সংকোচ ছেড়ে যথাসময়ে ডাক্তারের সরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করে প্রাণঘাতি এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করুন।

লেখক: সার্ভিল্যান্স মেডিকেল অফিসার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১২

সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।