ঢাকা: গত শিক্ষাবর্ষগুলোর মতো এবারও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি এবং বেতন আদায় করতে পারবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নীতিমালার সংশোধনী চূড়ান্ত না হলেও ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা) আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, এবারও ভর্তি ফি নির্ধারিত হবে না। ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নীতিমালা’ ছাড়াই এবারও ভর্তি হতে হবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা নীতিমালায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ বছরের জন্য কোর্স ফি সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকা এবং মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার সুপারিশ ছিল।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি নির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে এটা করা হয়।
গত কয়েক বছর ধরে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোর্স ফি বাবদ ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ২০১১ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটি নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশ করেছিল।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকায় তিন একর এবং ঢাকার বাইরে ৫ একর জায়গা থাকার নিয়ম থাকলেও অনেক কলেজ এটা মানছে না। ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকার বাধ্যবাধকতাও তারা মানছে না।
২০১১ সালে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. মজিবুর রহমান ফকির নিজে ২০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পান। কলেজগুলোতে মেধা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা থাকলেও তা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রতিবেদনে বলেন, বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো নিজেদের খুশি মতো ফি আদায় করছে।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ৩৮টি মেডিকেল কলেজ ও ১১টি ডেন্টাল কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
বিএমএর সাবেক সভাপতি এবং ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর সভাপতি রশিদ-ই মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি ফি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। সদিচ্ছা থাকলেই সহনশীল ভর্তি ফি নির্ধারণ করতে পারতো সরকার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বৈষম্য দূরীকরণে সরকারি হস্তক্ষেপ দরকার। ’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘লাইসেন্স দিতে এবং ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারলে ফি নির্ধারণ করতে পারবে না কেন?’ আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি সুরাহা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
রশিদ-ই মাহবুব আরো বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্য হচ্ছে। কেননা প্রাইভেট মেডিকেল এডুকেশন পার্লামেন্টারি কমিটির সিদ্ধান্ত মানছে না। অথচ এটি চলছে সরকারি ছাড়পত্রে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন তারা নিজেদের মতো করে এটি চালায়। নিজেদের স্বার্থে পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন করে। ’
রশিদ-ই মাহবুব বলেন, ‘নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যেই বিষয়টিকে এভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আর সেজন্যই ইচ্ছামতো ফি নেওয়া সম্ভব হয়। ’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার মান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অনেক সময়ই অবসরপ্রাপ্ত বা নবীন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। এ সব শিক্ষকরা বিভিন্ন জায়গায় ক্লাস করান। আবার অনেক সময় এমন শিক্ষক দেওয়া হয়, যাদের টিচিং অভিজ্ঞতা নেই। এছাড়া ক্লিনিকগুলোতে সাধারণ মানের কোনো রোগী আসে না। এখানেও শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। ’
বাণিজ্য ঠেকাতে সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সরকারি পর্যায়ে তদারকি করা। আর বাণিজ্য ঠেকাতে প্রয়োজন সরকারি হস্তক্ষেপ। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৩
এমএন/এবি/জিসিপি