ঢাকা: বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির (বিসিডিএস) কাছে জিম্মি মিটফোর্ডের ওষুধ ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন দেশের ওষুধ কেনাবেচার সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ স্থান বাবুবাজার ও মিটফোর্ড এলাকার ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করছে এই সমিতি।
আর অসাধু ব্যবসায়ীরা সমিতিকে চাঁদা দিয়েই মানুষের জীবন-মরণ নির্ধারণকারী নকল ও নিম্নমানের ওষুধে সয়লাব করছেন বাজার। এরই মধ্যে সমিতি পুরো দেশকে জিম্মি করে বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সকল ওষুধের দোকানগুলোকে পুঁজি করে।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিসিডিএস-এর সভাপতি সাদেকুর রহমান, সমিতির ঢাকা বিভাগের সভাপতি সোলেমান দেওয়ানসহ বেশ কয়েকজন নেতা এ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।
সাদেকুর রহমান ও সোলেমান দেওয়ার কেউই কোনো ওষুধ বা কেমিস্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন ওষুধের বাজারে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসে মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীদের এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয় সমিতিকে। এ চাঁদা সবার জন্যেই বাধ্যতামূলক। না দেওয়া হলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ওষুধ কোম্পানিকে তিন হাজার টাকা করে দিতে হয় সমিতিকে। এছাড়াও ভারতীয় ব্র্যান্ডের ওষুধ আনতে চাঁদা দিতে হয় সমিতিকে।
সমিতির লোকেরা নিজেদের পকেটে চাঁদা ঢুকিয়ে ওষুধের বাজার সয়লাব করছেন নকল আর ভেজাল ওষুধে।
নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধের উদাহরণ দিতে গিয়ে এক ব্যবসায়ী জানান, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের এক বক্স (১৫০ পিস) নিউটেক ওষুধের পাইকারি মূল্য ৩২২ টাকা। আবার এলবিঅন কোম্পানির রেনিডিটিন এক বক্স (১৫০ পিস) ওষুধের দাম ৫০ টাকা। আর বড় কোম্পানির সিপ্রোসিনের বক্স ৩৮৮ টাকা হলেও, ছোট কোম্পানিরটা কেনা যায় ২৮ বা ৩০ টাকা দিয়েই।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা এসব ওষুধ দোকানে রাখেন। ইনুবা, ন্যাশনাল ড্রাগ ছাড়াও রয়েছে আরও অসংখ্য নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানি।
আবার ভারতীয় যৌন শক্তি বাড়ানো ওষুধ সেনেগ্রা, ইজগার্ড, ইনগার্ড ওষুধ বাজারে আনেন কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। এসব ওষুধ বাজারে আনতেও নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ দিতে হয় সমিতিকে।
মিটফোর্ডের কিছু দোকানে বিক্রির জন্য দেওয়া ওষুধের স্যাম্পল বিক্রি করেন কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশনাল অফিসার এবং চিকিৎসকরা। যেসব দোকান এসব স্যাম্পলের ব্যবসা করেন, সমিতিকে মাসে ৩ হাজার টাকা করে দিতে হয় তাদের।
গত শনিবার নকল ওষুধের বিরুদ্ধে সরকারের স্মরণকালের বড় অভিযানে কয়েক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ঘটনাকে সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীরা অভিনন্দন জানালেও বিসিডিএস আগামী বৃহস্পতিবার দেশের সব ওষুধের দোকান বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে সমিতির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মাস শেষ হওয়ার আগেই এক হাজার টাকা করে সব দোকান থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের সভাপতি হারুন উর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, মিটফোর্ডে ছোট ছোট সিন্ডিকেটে নকল ওষুধের ব্যবসা চালানো হচ্ছে। এসব নকল ওষুধ ও নিম্নমানের ওষুধ আটক করা অবশ্যই শুভ লক্ষণ।
বৃহস্পতিবারের ধর্মঘটের ব্যাপারে জানতে সাদেকুর রহমান ও সোলেমান দেওয়ানের সঙ্গে ফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
ধর্মঘটের ব্যাপারে ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সূত্র বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সমিতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তবে সমিতি তাদের পূর্বঘোষিত ধর্মঘট অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু দাবি মেনে নেওয়া হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে।
উল্লেখ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ওষুধ ব্যবসায়ীদের মুক্তি দাবিতে গত রোববার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড রোডের ওষুধ ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেন। গ্রেফতার ব্যবসায়ীদের মুক্তি এবং জব্দ করা ওষুধ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবারের মধ্যে গ্রেফতার ব্যবসায়ীদের মুক্তি, জব্দ করা ওষুধ ফেরত এবং সরকার আলোচনায় না বসলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব ওষুধের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে বিসিডিএস।
গত শনিবার পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকার নয়টি মার্কেটে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগে ১০৩ জনকে গ্রেফতার করে ৠাব। তাদের মধ্যে ২০ জনকে একবছর করে কারাদণ্ড দেন ৠাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাকি ৮৩ জনকে সোয়া কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এসময় সিলগালা করে দেওয়া হয় ২৮টি ওষুধের দোকান। একই দিন রাতে ৮২ জন ওষুধ ব্যবসায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোয়া কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৩/আপডেট ১১১৫ ঘণ্টা
এমএন/এএ/বিএসকে/জেএম