ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কফির বহুমাত্রিক গুণ

কবির হোসেন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৩
কফির বহুমাত্রিক গুণ

ঢাকা: বিশ্বে এমন একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি জীবনে একবারও কফি পান করেননি। ধনী-গরিব, সাদা-কালো, বড়- ছোট সব দেশেই কফি একটি জনপ্রিয় পানীয়।

কফির রয়েছে বহুমাত্রিক গুণ।  

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কফি প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্টারবার্ক। কোম্পানিটির ২০ হাজার  ৮শ ৯১টি কফি স্টোরের মধ্যে কেবল আমেরিকাতেই ১৩ হাজার ২শ’ ৭৯টি। এতেই বোঝা যায় আমেরিকানরা কতটা কফিপ্রিয়।

এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ বা তার বেশি বয়সের ৫৪ ভাগ আমেরিকান প্রতিদিন কফি পান করেন। প্রতিদিন কফি পানে দেহের ত্বক ক্যান্সার প্রতিরোধ, মস্তিষ্কের সুস্থ্যতা সহ বিভিন্ন উপকার হয়ে থাকে। কফি পানে এরকম ১১টি উপকারিতা নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।    

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট:
২০০৫ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, কফির মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর কোন খাবারই ভুবনে তৈরি হয়নি। যদিও ফলমূল এবং শাকসবজিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে কিন্তু তার কোনোটিই কফির ধারকাছে নেই।  

চাপ কমাতে:
সিউল ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটিতে ইদুরের মস্তিষ্কের উপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিদ্রাহীনতার ফলে মস্তিষ্কের যে চাপের সৃষ্টি হয় কফি সে চাপ লাঘবে সাহায্য করে।

পার্কিনসন রোগ নির্মূলে:
বিজ্ঞানবিষয়ক দৈনিক সায়েন্স ডেইলি জানায়, পার্কিনসন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা কফি পানে দারুণভাবে উপকৃত হতে পারেন। কফি তাদের এই রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। শুধু রোগাক্রান্তরাই নয়, নিয়মিত কফি পান করলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা যারা কফি পান করেন না তাদের তুলনায় কম।
 
লিভারের জন্য উপকারী:
কফি মানবদেহের লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষভাবে কেউ যদি অ্যালকোহল আসক্ত হয়ে থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই।

২০০৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে,  যারা প্রতিদিন কফি পান করেন তাদের লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা ২০ ভাগ কম। ২২ বছরের উর্ধ্বে ১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষের উপর ওই গবেষণা চালানো হয়েছিল। যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকেন তাদের লিভার সিরোসিস হওয়ার জোর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, নন অ্যালকোহলিক ব্যক্তিদেরও রোগ নির্মূলেও কফি সাহায্য করে।

প্রফুল্ল রাখে:
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এক পরীক্ষায় প্রমাণ করেছে, যারা প্রতিদিন চার বা ততোধিক কাপ কফি পান করে তাদের বিষন্নতা হওয়ার সম্ভাবনা যারা কখনও পান করেনি তাদের চেয়ে ১০ ভাগ কম। কফিতে উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন নামে এক প্রকার উপাদান থাকার কারণেই এটি সম্ভব। তবে কোকাকোলোতে ক্যাফেইন থাকা সত্ত্বেও তা বিষন্নতা বাড়িয়ে দেয়।

আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে:
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২-৪ কাপ কফি পান করলে ছেলেদের আত্মহত্যার ঝুঁকি হ্রাস পায়। আর মেয়েদের আত্মহত্যার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।

ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসকরণে (নারীদের):
ব্রাইহাম অ্যান্ড উইমেন হসপিটাল অ্যান্ড হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ২০ বছরের উপর লক্ষাধিক নারী-পুরুষের উপর একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, যেসব মেয়েরা দৈনিক তিন বা ততোধিক কাপ কফি পান করেন তাদের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি যারা করে না তাদের চেয়ে অনেক কম।

ভালো অ্যাথলেট তৈরিতে:
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়,  বিজ্ঞানী ও অ্যাথলেটরা বিশ্বাস করে ভালো অ্যাথলেটিক পারফর্মেন্সের জন্য মাঠে নামার আগে এক কাপ কফি তাদের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। আর এটি দৌড় বা সাইক্লিং এর মতো কঠিন খেলার জন্য খুবই কার্যকরী। কফির ক্যাফেইন রক্তে ফ্যাটি এসিডের সৃষ্টি করে যা অ্যাথলেটের মাংসপেশী শোষণ করে বা  পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করে। তাই ফাইনালের চূড়ান্ত বাঁশি বাজার আগে দেহে কার্বোহাইড্রেট সঞ্চয় করে কফি অ্যাথলেটদের সাহায্য করে।

টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:
দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা চার বা তার বেশি কফি পান করেন (দিনে চার বা তার বেশি কাপ), তাঁদের টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার শঙ্কা ৫০ ভাগ কমে যায়।   এছাড়া অতিরিক্ত প্রতি কাপ পানে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আরো ৭ ভাগ হ্রাস পায়।

দীর্ঘদিন মস্তিষ্ক সুস্থ্য রাখতে:
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা এবং ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি এর গবেষকরা প্রমান করেছেন,  কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন স্মৃতিভ্রষ্টতা বা অ্যালজেইমার্স প্রতিরোধ করে। ৬৫ বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩ কাপ কফি খাওয়ার কারণে তাদের মনে রাখার ক্ষমতা বেড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার একজন ম্নায়ুবিজ্ঞানী বলেন, আমরা বলছি না কফি পানে আলজেইমার্স রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পরিমিতি কফি পানে আলজেইমার্স হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

বুদ্ধিমান করে তোলে:
সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কফি আপনাকে শুধু চাঙ্গা করবে তাই নয়, আপনার বুদ্ধিকেও কিছুটা শাণিত করতে পারে। কফির উপাদান ক্যাফেইন মনোউদ্দীপক দ্রব্য – যা স্নায়বিক কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করতে পারে। নিয়মিত কফি পানে মানসিক অবস্থার উন্নতি হতে পারে। মনোসংবেদনশীলতা বাড়তে পারে, স্মৃতি শক্তির উন্নতি হতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে গঠনমূলক মনোভাব তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৩
কেএইচ/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।