ঢাকা: দেশের ৫লাখ গরীব রোগীর চোখের ছানি অপারেশনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা সাইট সেভারস। চলতি বছর থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এসব রোগীর ছানি অপারেশন করা হবে।
আর এ কাজে সহযোগিতা দেবে সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ার (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর), উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও ১২টি বেসরকারি সহযোগী সংস্থার হাসপাতাল।
রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে শনিবার (১৭ জানুয়ারি) সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে সই করেছে সাইটসেভারস।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ন্যাশনাল আই কেয়ার, সাইটসেভার্সসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা ও হাসপাতালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সর্বস্তরের মানুষকে প্রয়োজনীয় চক্ষু সেবার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পেশেন্টস স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম (পিএসপি) করা হবে। গরীব রোগী, যাদের ছানি অপারেশন প্রয়োজন- তাদের বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজশাহী, রংপুর, খুলনা এবং ঢাকা বিভাগের (গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী) সবগুলো জেলা সদর হাসপাতাল এবং ১২টি সহযোগী সংস্থার ২১টি হাসপাতালে ছানিজনিত অন্ধত্বের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ‘ভিশন বাংলাদেশ-জেলা চক্ষু পরিচর্যা কর্মসূচি’র আওতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ছানি অপারেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি হেলথ সিস্টেম স্ট্রেদেনিং-এর জন্য অ্যাডভোকেসি প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে।
এছাড়া যে কোনো একটি জেলায় পাইলটিং হিসেবে ফ্যানচাইজিং আদলে স্থানীয় চশমা দোকানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী দৃষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের স্বল্প মূল্যে বা বিনামূল্যে চশমা সরবরাহ করা হবে।
ন্যাশনাল আই কেয়ার-এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. জালাল আহমেদ জানান, সহযোগি সংস্থাগুলো স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটার্যাক্ট সার্জিক্যাল প্রটোকল অনুসরণ করে তাদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করবে।
এক্ষেত্রে পেশেন্টস স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম (পিএসপি) এর মাধ্যমে সনাক্তকৃত ছানি রোগীদের অপারেশনের জন্য বা সেবা প্রদান বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হবে না।
সাইটসেভার্স বাংলাদেশ-এর এ দেশীয় পরিচালক ডা. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, সাইটসেভার্স দারিদ্র্য ছানি রোগীদের প্রকল্পের নিয়ম অনুসারে শতভাগ বিনামূল্যে অপারেশন করানো হবে। সহযেোগী সংস্থাগুলোতে অপারেশনকৃত ছানি রোগীদের ফলো-আপ এর জন্য আউট পেশেন্টস ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি), ভিশন সেন্টার, সাব সেন্টার, পিএসপি অথবা স্পেশাল ফলো আপ প্রোগ্রামের ব্যবস্থা থাকবে। ফলো আপ ভিজিটের সময় রোগীর কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া যাবে না।
‘রোগীর সুবিধার্থে অপারেশনের সময় গাড়িতে করে হাসপাতালে আনা নেওয়ার ব্যবস্থাও এ কার্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত হবে’—বলেন ডা. কিবরিয়া।
ডিজিএইচএস’র এনসিডিসি-এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই সাইটসেভার্স চক্ষুসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে এক দৃষ্টান্তমূলক কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই কার্যক্রমেও আরও ৫ লাখ মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের হেলথ, নিউট্রেশন ও পপুলেশন প্রোগ্রাম-এর পরিচালক ডা. কাওসার আফসানাও বক্তব্য দেন।
বিভাগ ভিত্তিক সহযোগী সংস্থার হাসপাতাল:
খুলনা বিভাগ: আদ-দ্বীন (কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা), দৃষ্টিদান আই হসপিটাল (বাগেরহাট), লেজার আই হসপিটাল (খুলনা), বিএনএসবি বেইস আই হসপিটাল (খুলনা)।
রাজশাহী বিভাগ: প্রফেসর এম এ মতিন মেমোরিয়াল বিএনএসবি বেইস আই হাসপাতাল (সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর নওগাঁ এবং রাজশাহী), বগুড়া মিশন হাসপাতাল (বগুড়া এবং জয়পুরহাট), গ্রামীণ জিসিআই (বগুড়া ও ঠাকুরগাও), মক্কা আই হসপিটাল (রাজশাহী)।
রংপুর বিভাগ: কাশেম ফাউন্ডেশন (কুড়িগ্রাম, নীলফামারী), কমিউনিটি আই হসপিটাল (রংপুর), দ্বীপ আই কেয়ার ফাউন্ডেশন (রংপুর), গাউসল আজম বিএনএসবি আই হাসপাতাল (দিনাজপুর)।
সাইটসেভার্স যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজভিত্তিক পুনর্বাসনসহ একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে।
বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি সহযোগী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে সাইটসেভার্স।
এ পর্যন্ত ১৬ লাখের বেশি ছানি অপারেশনের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজারে বেশি শিশু।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫