ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অবহেলা-ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

ওসমানীতে ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু

বাংলানিউজটিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
ওসমানীতে ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ (সিওমেক) হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসার অবহেলায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মৃতদের স্বজনরা।



এদের মধ্যে সোমবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) এক রাতেই ১০ শিশুর মৃত্যু হয়।

মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআইএস সেকশনের কর্মকর্তা সাইফুল মালেক খান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চত করেন।

তবে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ, নার্স এবং ডাক্তারের চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ১০ শিশুর মধ্যে ৬ জন জন্ম জটিলতার কারণে, ২ জন অপুষ্টিজনিত সংক্রমণে, একজন ‍নিউমোনিয়া রোগে এবং অন্য একজন ঠাণ্ডাজনিত কারণে মারা গেছে।

মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে রয়েছে সাড়ে তিন বছর বয়সী তাজরিয়া, দেড় বছর বয়সী সামিয়া, ছয় মাস বয়সী নাদিরা, আড়াই বছরের মাহাদী, তিন বছরের সাফরাজ ও সাত দিনের আব্দুস সুবহান আকাশ।

এছাড়া রয়েছে ছন্দা রানী, আসমা বেগম ও নিলুফার একদিনের নবজাতক এবং ইয়াসমিন বেগমের তিনদিনের নবজাতক।

এ ঘটনায় মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ইসমাইল পাটোয়ারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, শিশু বিভাগের বিভাগীর প্রধান ডা. মনজ্জির আলী এবং আবাসিক চিকিৎসক রঞ্জন কুমার রায়।

তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. আব্দুস সালাম জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে না। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মারা যাওয়ায় বিষয়টি সবার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। তবে সীমিত লোকবল দিয়ে সিলেটের সবচেয়ে বড় এই প্রতিষ্ঠানেও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক রাতেই হাসপাতালের পঞ্চম তলার ২২, ২৩ ও ২৪ নং শিশু ওয়ার্ডে ওই দশ শিশু মারা যায়।

মারা যাওয়া শিশুদের স্বজনদের অভিযোগ, রাত তিনটার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত নয়জন শিশু মারা যায়। ওই সময় কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। আর নার্সদের শরণাপন্ন হলে নার্সরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে সকাল সাতটার সময় আসতে বলেন।

অনেকের অভিযোগ, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও হাসপাতালের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ডরা টাকা ছাড়া তাদের ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকতে দেননি।

শিশু আকাশের নানি মারজান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আমার নাতিকে সোমবার বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করি। রাত তিনটার দিকে সে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নার্সদের কাছে গেলে তারা দুর্ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেন। এরপর দু্ই ঘণ্টায় ৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়।

রাত তিনটায় মারা যায় সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মুতাহিদ আলীর তিন বছরের শিশু সন্তান সাফরাজ।

শিশুটি মারা যাওয়ার পরও তার পিতাকে ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে দেননি সিকিউরিটি গার্ড।

এ তথ্য নিশ্চিত করেন অপর এক রোগীর স্বজন ছাতক উপজেলার বাসিন্দা হাবিব আলী।

একই অভিযোগ সিলেটের বিশ্বনাথের আনসার আলী, জকিগঞ্জের বেলাল আহমদ, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মনোরঞ্জন দাসের।

তাদের অভিযোগ, রাতে শিশুদের ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিচর্যার কথা থাকলেও চিকিৎসক এবং নার্সদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১০ শিশু ছাড়াও মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যাওয়া অন্য ২২ জনের মধ্যে হৃদরোগে পাঁচজন, স্ট্রোকজনিত কারণে পাঁচজন, সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে তিনজন, ক্যান্সারে একজন, রক্তশূন্যতায় একজন, পয়জনিংয়ে একজনসহ বিভিন্ন কারণে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান সেকশন কর্মকর্তা সাইফুল মালেক খান।

তবে তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. মনজ্জির আলী ক্লাস-পরীক্ষা চলার কথা বলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে জানান, এসব মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক, অহেতুক সাংবাদিকরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

এদিকে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার আব্দুস ছবুর মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, রাতে ৭৫ জন রোগী এসে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। মারা যাওয়া শিশুদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এনে ভর্তি করা হয়েছিল। তারা বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

তিনি বলেন, এরপরও চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে কিনা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রোগ নির্ণয়ে তিনি আইডিসিআর’র পরিচালক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ওই ঘটনায় দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর সচিবালয়ের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক এ মৃত্যুর ঘটনাকে স্বাভাবিক দাবি করে জানান, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন কারা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে কোনো গাফিলতির প্রমাণ থাকলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক জানান, ১০ শিশুর মধ্যে শ্বাসকষ্টে ৪ জন, অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ৩ জন, ডায়রিয়ায় ২ জন এবং স্বাভাবিকভাবে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫/ আপডেটেড: ১৫৫৯ ঘণ্টা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।