ঢাকা: শিশুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও দেশের টেকসই উন্নয়নে শিশুসম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই প্রথম নীতিমালা হচ্ছে বাংলাদেশেই। ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর)’ একইসঙ্গে শিশুদের কাজ ও শিক্ষার বিষয়টি তদারকিতে জোর দেবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জাতীয় সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
‘শিশুদের জন্য জাতীয় ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা নীতি-২০১৫’র খসড়ার মূল বিষয়গুলো বর্ণনা করতেই সেমিনারের আয়োজন করে মন্ত্রণালয়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, এই নীতিমালা একসঙ্গে সরকার ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের জন্য গাইড লাইন হিসেবে কাজ করবে। নীতিমালা বলে বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না বলেও মন্তব্য তাদের।
আয়োজকদের দাবি, বিশ্বে এমন নীতিমালা (বাংলাদেশেই) প্রথম হচ্ছে। এই প্রথম শুধুমাত্র শিশু স্বার্থনির্ভর নীতিমালা হতে চলেছে। যা পরবর্তীতে আইনে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে।
পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, পণ্য উৎপাদন, বিপণন, প্রচারণা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এ নীতিমালা। এছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর ব্যবসায়িক সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. ফাইজুর রহমান। সেভ দ্য চিলড্রেনের এডুকেশন ফর ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক শাহিদা বেগম অনুষ্ঠানে ‘শিশুদের জন্য জাতীয় ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা নীতি’র খসড়া উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার, ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল ম্যাকগ্রাথ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানব ও সামাজিক উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষা উপদেষ্টা লায়লা বাকি, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন এমরানুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সাবরিনা ইসলাম এবং গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে সংশ্লিষ্টরা জানান, সিএসআর বাধ্যতামূলক নয়, দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে শিশুদের উপযোগিতা বাড়াতে আমরা পলিসিতে যাচ্ছি।
এ পলিসিতে শিশুরা কাজের বাইরে থেকে নয়, বরং কাজ ও শিক্ষায় একসঙ্গে যুক্ত থাকবে।
নীতিমালায় কিশোরীদের যৌন-হয়রানী রোধে ভূমিকার উপায় রাখতে উপস্থিত সুধীজনরা সুপারিশ জানান। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখার বিষয়টিও বিবেচনার সুপারিশ করেন তারা।
এতে গণমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়টিও উঠে আসে। জনস্বার্থে প্রতিদিনই অন্তত কিছুক্ষণ প্রচারণা চালাতে নীতিমালা চূড়ান্তের আগে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের পরামর্শ নেওয়া হতে পারে বলেও জানান বক্তারা।
সেমিনারে এ নীতির উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেন বক্তারা। শিশু-কিশোরদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা, তাদের দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতাকে উৎসাহিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের জন্য একই মানের সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা, বর্তমানে ভিন্ন ভিন্নভাবে চলমান সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম সমন্বিত করা নীতির উদ্দেশ্য।
সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা, দাতাসংস্থা, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসা খাত, নাগরিক সমাজ, ট্রেড ইউনিয়ন, গণমাধ্যম ও শিক্ষাবিদ প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫