২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় যখন, তখন বেডে অক্সিজেন সরবরাহের লাইন স্থাপনসহ বেশকিছু কাজ বাকি ছিল। এসব কাজ তো বাকিই আছে; এমনকি ভবনটি সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও এখনও বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালটিতে নেই লোকবল। প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রশাসনিক অনুমোদন না পেলে নতুন ভবনটি চালু করা সম্ভব নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীর ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী প্রায় ২৬০ জন। পুরাতন ভবনে জায়গা না হওয়ায় নতুন ভবনের পুরো মেঝেতে রোগীদের বিছানা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। বিশেষ করে জায়গা স্বল্পতায় ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। তবে নতুন ভবনের শুধু বহির্বিভাগ চালু রেখে চিকিৎসকরা সেখানে রোগী দেখছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৪ জুন ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পায় হাসপাতালটি। তবে ১৬ বছর ধরে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম। ৫০ শয্যার প্রয়োজনীয় ২১ চিকিৎসকের জায়গায় বর্তমানে কর্মরত মাত্র ১২ জন। এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক জনসভায় ১৫০ শয্যার নতুর ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালের ১৬ মে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে হাসপাতালের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়।
হাসপাতাল ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১০ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হস্তান্তর ছাড়াই গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫০ শয্যার নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। বেশকিছু কাজ বাকি থাকলেও তা করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সূত্র জানায়, কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের কাছে এখনও হস্তান্তর করেনি ভবনটি।
৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (এইচপিএনএসডিপি) আওতায় নির্মিত হাসপাতাল ভবনে রোগীদের জন্য রয়েছে ১৫টি কেবিন ব্লক, ৫টি অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। এছাড়া রয়েছে বড় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বিভাগ, এসডিইউ বিভাগ, করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), সিটি স্ক্যান, বহির্বিভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিজস্ব বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, চলাচলের জন্য তিনটি সিঁড়ি ও দু’টি বেড লিফ্ট। এবার গুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট ৬৬ জন চিকিৎসক ও স্টাফের জন্য ১২০ পৃষ্ঠার একটি চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী। ২৯ আগস্ট চাহিদাপত্রটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) শহিদ সাদিকুল ইসলাম স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ চাহিদাপত্রের আলোকে স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানায় সূত্রটি।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ শয্যারই পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসক নেই। তারপরও ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের ১৬ বছর পর জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। চাহিদাপত্রটি স্বাস্থ্য অধিদপ্ততর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সেবা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ১৫০ শয্যার নতুন ভবন চালুর আগে জনবল নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল। দক্ষ জনবল না থাকায় অত্যাধুনিক অনেক সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। লোকবলের নিয়োগ, সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত ভবনটিতে কার্যক্রম চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ১০ বছরে হাসপাতাল সেবা কমিটির কোনো সভা হয়নি। ১৫০ শয্যার যে ভবন উদ্বোধন করে দিয়ে গেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, তা এখনও হস্তান্তরই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবার গণপূর্ত বিভাগও হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করেনি ভবনটি।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ২০০৩ সালে এ হাসপাতালটি ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে যে জনবল দরকার, তার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি আগের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রশাসন। ৫০ শয্যার জন্য যে পরিমাণ জনবল দরকার সেটিও নেই এখানে। তারপরও ১০০ শয্যার জনবলের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া গেলে হাসপাতালের সেবার মান কিছুটা উন্নত হবে। এছাড়াও ১৫০ শয্যার যে ভবন হস্তান্তরের প্রক্রিয়া রয়েছে, এটাকে ত্বরান্বিত করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ করেছি, যেন অসম্পন্ন কাজ দ্রুত শেষ করে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভবন হস্তান্তর হয়ে গেলে ২৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনও করে ফেলবো এবং জনবলের জন্য প্রচেষ্টাও চালাবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
এসআরএস