ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রয়োজন সুশাসন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯
‘নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রয়োজন সুশাসন’

ঢাকা: ভেজাল খাদ্যরোধে নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ গড়ার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তবে তারা এও বলেন, শুধু সচেতনতা সৃষ্টি করলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবে না। কারণ ভোক্তারা সচেতন হয়ে পণ্য কেনে না। তারা বিশ্বাসের ওপর পণ্য কেনে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সুশাসন।

এজন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) ঢেলে সাজানোর তাগিদ দিয়ে সরকারকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানান বক্তারা।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনসাস কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

বক্তারা বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে একটি সংস্থাকেই দায়িত্ব দিতে হবে। বিএসটিআইয়ের ক্ষমতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যদি ভেজাল খাদ্য উৎপাদন হয়, তাহলে সেটা বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ লাগবে কেন?  সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক হয়, তাহলে শক্তিশালী একটি সংস্থা গড়ে তোলা যাবে। যেটির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার কাজ বেগবান হবে।  

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্য নির্দিষ্ট একজনের বিষয় না। ভোক্তারও অনেক দায় রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য খেতে সচেতন হতে হবে। কনজুমার থেকে সরকার, সবাইকে সক্রিয় হতে হবে।  শুধু সচেতন হলে হবে না, সক্রিয়তাও প্রয়োজন।  

তিনি বলেন, ফুড প্রসেসিং একটা বিশাল খাত। এটি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে দক্ষ জনবল দরকার। ভেজাল তো আছেই, সেই সঙ্গে অপরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে। এটা গুরুত্ব না দিলে সার্বিক সমাধান আসবে না।  

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নিরাপদ খাদ্য আমাদের মৌলিক অধিকার। আমাদের প্রজন্ম যে নেতৃত্ব দিতে পারেনি, বর্তমান প্রজন্ম সেই দায়িত্ব পালন করেছে। এটা আশার দিক। এ মৌলিক অধিকার প্রতিটা ধাপে নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতা সব স্তরেই সৃষ্টি করতে হবে।  

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল একটি দুর্নীতি। সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। জনগণকেও সচেতন করতে হবে।

‘সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধু সরকার একা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা পৃথিবীর অনেক দেশেরই উপরে আছি, তাই আমরা পারবোই। ’ 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. জুবায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, খাদ্যে আশঙ্কাজনক হারে ভেজাল বাড়ছে। কৃষক যে কীটনাশক ব্যবহার করছে, যারা খাচ্ছে তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি কৃষকেরও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, একটা পণ্য কী মাত্রায় সুপার শপে রাখা হচ্ছে, সেটা সঠিক মাত্রায় রাখা হচ্ছে কী না, সেজন্য কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দরকার। কীভাবে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা যায়, এ নিয়ে ভাবা দরকার।

র‌্যাবের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ, এদেশের নাগরিক। আমাদের দেশে ধামাচাপা দেওয়ার সংস্কৃতি রয়েছে। অথচ বিদেশে কোনো সমস্যা হলে সেটা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।  

‘আমাদের সবচেয়ে বড় অভাব সততার। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কারণ পণ্যের কোয়ালিটির জন্যই সেখান থেকে বেশি দাম দিয়ে ভোক্তারা পণ্য কিনে থাকে। ফলে সেখানে যদি কোয়ালিটি না থাকে, তাহলে জরিমানা করা হয়। ’ 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, সরকার সবসময় চাইবে নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করতে। সরকার ধরাধরি করবে না। আইন বিচ্যুতি ঘটলে তখন সরকারের সংস্থা কাজ করবে।  

তিনি বলেন, দেশে বড় বড় অনেক মোগল আছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় এসেছে। তা না হলে দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবে না। নাম ম্যানশন করে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। পুষ্টি কোম্পানি কীভাবে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বিক্রি করে? এভাবে যারা ভেজাল খাদ্য বিক্রি করে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমাদেরও তথ্য জানতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে।  

মূল প্রবন্ধে জাকির হোসেন খান বলেন, সমস্যা আমরা জানি, কিন্তু আমাদের দরকার সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। একটি জাতির সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত উৎপাদন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ভেজাল জুস খেয়ে শিশুদের কিডনি নষ্ট হচ্ছে। এজন্য ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নাগরিকদের এসব কাজে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।  

বক্তারা বলেন, সামান্য লাভের আশায় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে দিচ্ছে। তাদেরকে বুঝাতে হবে। ভেজাল খাদ্যের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রই। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ওয়াটার এইডের এমডি আবু বকর, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান খান, এসিআইর পরিচালক কামরুল হাসান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯

টিএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।