ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাগেরহাটে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, স্যালাইন ও শয্যা সংকটে হাসপাতাল

এসএস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
বাগেরহাটে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, স্যালাইন ও শয্যা সংকটে হাসপাতাল

বাগেরহাট: দূষিত পানি পান করায় বাগেরহাটে আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় রোগী ও রোগীর স্বজনরাও বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মেঝেতে।

সরকারি হাসপাতালে স্যালাইনসহ অন্য ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে প্রতিনিয়ত পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশুদ্ধ পানির সংস্থান হলে কিছুদিনের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমে আসবে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, বারান্দার মেঝেতে রয়েছেন ৪-৫ জন রোগী। ভিতরে চারটি শয্যা ও মেঝেতে মিলে রয়েছে অন্তত ১৮-২০ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে চার শয্যার এই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশু মিলে অন্তত দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। শুধু বাগেরহাট সদর হাসপাতালেই নয় জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জসহ নয়টি উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একই অবস্থা। বাদ যায়নি বেসরকারি ক্লিনিকও। বেসরকারি ক্লিনিকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন একটু স্বচ্ছল রোগীরা।  

গত এক সপ্তাহে বাগেরহাট জেলায় অন্তত ২ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় স্যালাইন ও শয্যা সংকটে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ একটি আইভি স্যালাইন ও দুইটি ট্যাবলেট ছাড়া রোগীরা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সকল ওষুধ কিনতে হচ্ছে তাদের। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত স্বামী-শ্বশুর, এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে থাকা গৃহবধূ মুনিরা বেগম বলেন, হঠাৎ করে বাড়ির চারজনের পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়। দুইদিনে না কমায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ছোট ছেলের জন্য একটি বেড পেলেও, স্বামী, শ্বশুর ও মেয়েকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মেহেদী হাসানের চাচা সাইফুজ্জামান জানান, প্রথমে বমি, তারপরে পাতলা পায়খানা শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনদিন হলো হাসপাতালে রয়েছি। এখানে একটি স্যালাইন ও দুইটি ট্যাবলেট ছাড়া সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। প্রায় তিন হাজার টাকার ওষুধ কিনেছি। এখানের পরিবেশও তেমন ভালো না। গরীব রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার কালিকাবাড়ি থেকে চুমকি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, টিউবওয়েলের পানি পান করে ডায়রিয়া হয়েছে। মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে দুইদিন ভর্তি ছিলাম। সেখানে থেকে ভাল না হওয়ায় এখানে পাঠিয়েছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মিরাজুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, সুপেয় পানির অভাবে দূষিত পানি পান এবং প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালের চারটি বেডের অনুকূলে প্রতিদিন ২০-২৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপের কারণে স্যালাইন সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। আমরাও রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এখনো অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, উপকূলীয় জেলার অধিকাংশ এলাকায় পানি লবণাক্ত। এরপরেও অনাবৃষ্টি ও নদীর পানি কমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির নিরাপদ স্থান পুকুরে পানি নেই। যার ফলে স্থানীয়রা যে যার মত পানি পান করছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আশাকরি বৃষ্টি হলে ও বিশুদ্ধ পানি পেলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।