ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

খুলনায় বাড়ছে করোনা রোগী, স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২১
খুলনায় বাড়ছে করোনা রোগী, স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ

খুলনা: খুলনা বিভাগে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অধিকাংশ মানুষ।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় খুলনার চার থানা এলাকায় সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধি-নিষেধ চলছে। গত শুক্রবার (৪ জুন) ভোর থেকে শুরু হওয়া এ বিধি-নিষেধ চলবে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত। কঠোর বিধি-নিষেধের প্রথম দিন কিছুটা মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি মানলেও শনি ও রোববার অনেকটা গা ছাড়াভাবে চলছে। যদিও প্রশাসনের তৎপরতার কমতি নেই।

খুলনা করোনা হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বাইরে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি রয়েছে। ১০০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে করোনায় ছয়জন ও উপসর্গে একজনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে খুলনা করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের আইসিইউতে ১৩ জন ও এইচডিইউতে ১২ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এ অবস্থায় স্বল্প জনবল নিয়ে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনা করোনা হাসপাতালে বর্তমানে ১২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে রেডজোনে ৯৫ জন রোগী ও ইয়োলোজোনে ৩০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৪ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন ও একজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, খুলনায় করোনা হাসপাতাল হওয়ার পর একসঙ্গে ১২৫ জন রোগী ভর্তি এ প্রথম। এর আগে ১০০ রোগীর কাছাকাছি ভর্তি হয়েছেন। তবে এবার যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে তা আগে কখনো হয়নি। এত রোগীর চাপ সামলাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এদিকে খুলনা বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৪২ জনের। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০১ জন।  

রোববার (৬ জুন) দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন খুলনার তিনজন, সাতক্ষীরার একজন, বাগেরহাটের একজন ও যশোরের একজন। এছাড়া উপসর্গে খুমেক হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় মৃতরা হলেন- আমিনুর রহমান মোল্লা (৮০), নুরুল ইসলাম (৭৫), মিজানুর আকন, রেহেনা বেগম (৬১) ও ওসমান সরদার (৭৪)। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়।

খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৯৮৪ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭২ জনে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১ হাজার ৮৫৪ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা য়ায়, বিভাগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনায় শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৬৯ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮২ জন। সুস্থ হয়েছেন নয় হাজার ৩৫১ জন।  

এছাড়া বাগেরহাটে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭৫ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৭ জন ও সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৩২ জন। সাতক্ষীরায় শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৪৮ জন ও মারা গেছেন ৪৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৪৫১ জন।

যশোরে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন সাত হাজার ২৭০ জন, মারা গেছেন ৮২ জন ও সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৪৩৩ জন। নড়াইলে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৯০৪ জন, মারা গেছেন ২৭ জন ও সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮৩৯ জন। মাগুরায় করোনায় শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ২৭৩ জন, মারা গেছেন ২৩ জন ও সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ২১৪ জন।

ঝিনাইদহে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৭১ জন, মারা গেছেন ৫৭ জন ও সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৭৪৪ জন। কুষ্টিয়ায় করোনায় শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ১৪৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১১৯ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৭১৭ জন।

চুয়াডাঙ্গায় শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬২ জন, মারা গেছেন ৬৪ জন ও সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮২৩ জন। শনাক্তের দিক দিয়ে সর্বনিম্নে রয়েছে মেহেরপুর। এখানে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৮৫০ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২১
এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।