ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিট যেন আবর্জনার ভাগাড়!

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিট যেন আবর্জনার ভাগাড়!

বরিশাল: দক্ষিণের জেলাগুলোর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে করোনার উপসর্গ ও আক্রান্ত রোগীর চাপ। বিশেষ করে আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম থাকা করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বাড়ছে।

 

বাড়তি রোগীর চাপে শেবাচিম হাসপাতালের নতুন পাঁচতলা ভবনে অবস্থিত করোনা ইউনিটে থাকা রোগীদের বর্জ্য অপসারণেও হিমশমি খেতে হচ্ছে। এই ইউনিট যেন পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে।

হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলছেন, রোগী ও তাদের স্বজনদের সদিচ্ছার অভাবেই হাসপাতালের করোনা ও অবজারবেশন ওয়ার্ড পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করলেও তারা তা মানছেন না।

তারা জানান, করোনা ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গা নির্ধারিত বাস্কেট রয়েছে ময়লা ফেলার জন্য। কিন্তু রোগীর স্বজনরা সেখানে না ফেলে টয়লেটের সামনে, ভেতরে, কক্ষের জানালা ও রুমের বারান্দা দিয়ে খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ, বিভিন্ন ওষুধের খোসা, গ্লোভস, পানির বোতল, প্লাস্টিরে বাটি, ওয়ান টাইম প্যাকেট ফেলছেন। এতে পরিষ্কার করতে যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকছে।  

যদিও আলতাফ হাওলাদার নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, যারা হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন, তারাও সহসা কেউ করোনা ওয়ার্ডে আসতে চায় না। আর করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বর্তমানে দশজনের কাজ একজনে করতে হয়, তারপরও শেষ করা যায় না।

এদিকে চিকিৎসা নিয়ে আপত্তি না থাকলেও রোগীর স্বজনরা বলছেন, নিয়মিত ওয়ার্ডের ভেতরে ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম পরিচালনা না করায় দিনে দিনে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলো। তার ওপর রোগী ও স্বজনদের কথা হিসাব করে টয়লেটগুলো নারী-পুরুষ ভেদে তৈরি না করায় এগুলোর ওপর যেমন চাপ থাকছে, তেমনি দুর্গন্ধময় ও অপরিষ্কার থাকছে প্রতিনিয়ত। তারমধ্যেই টয়লেটে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগী ও স্বজনদের।

নুরুল আমিন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, রোগীর সেবা দিতে নার্স ও চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমতো করছেন, এক কথায় আন্তরিকই বলা যায়। তবে করোনা ইউনিটের পরিবেশ থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। মেঝেতে ধুলো-বালি, বাথরুমের সামনে কর্দমাক্ত অবস্থাসহ যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। যার মধ্যে রোগীর খাবার, প্লাস্টিকের প্লেট, বাটি, গ্লাসসহ খাবার গ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম, পিপিই, মাস্ক, গ্লোভস, সিগারেটের পোড়া অংশ রয়েছে। সব মিলিয়ে যারা আমরা রোগীর সঙ্গে আসছি তারা যে কতোটা নিরাপদে বাড়ি ফিরবো তা বলতে পারছি না।

সুভাশীষ নামে অপর এক রোগীর স্বজন জানান, শুধু করোনা ইউনিট ময়লা-আবর্জনায় ভরা এমনটা নয়, এখানে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাইও নেই। রোগীর স্বজনদের সবাই সঠিকভাবে মাস্কও ব্যবহার করে না। আবার করোনার আক্রান্ত রোগীদের যারা দেখভাল করেন তারা যেমন বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করছেন, তেমনি সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুধু ট্রলি নয়, যে অটোরিকশা বা যানবাহনে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আনা হচ্ছে, তাও ঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করেই সাধারণ যাত্রীদের আনা-নেওয়া  করছে।

এদিকে রোগীর অক্সিজেন লাগানো, স্থানান্তর করা, বেডের পাশ থেকে ময়লা সরানোসহ বিভিন্ন কাজে কতিপয় ওয়ার্ডবয়কে টাকা দিতে হয়, না হলে কাঙ্ক্ষিত সেবা তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না বলে জানান রোগীর স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ করোনা ইউনিট চালু হলেও প্রথম রোগী ভর্তি হয় ওই বছরের ৮ এপ্রিল। শুরুতে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে, যা পরবর্তীসময়ে ২শত শয্যায় উন্নীত হয়।

তবে গত দুই বছরেও করোনা ইউনিটের জন্য নিয়োগ হয়নি চিকিৎসক-নার্স কিংবা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জনবল। সংকটে থাকা মূল হাসপাতাল থেকে ধার করে আনা চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা-সেবা।  

বর্তমান হিসেবে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ রোগীর অনুকূলে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দু’জন। যদিও ৪৫ জন নার্স দায়িত্বে রয়েছেন, তবে নেই তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। এরমধ্যেই করোনার রোগীদের জন্য ২২টি আইসিইউ এবং ১২টি ভেন্টিলেটর সংযুক্ত হয়েছে এখানে। আরও দ ‘টি আইসিইউ রয়েছে অপেক্ষমাণ।

আর হাসপাতাল বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা এখনো না হওয়ায় করোনা ইউনিটের ভবনটির সামেনই সেগুলো মাটিতে গর্ত করে ফেলা হচ্ছে।  

সার্বিক বিষয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালন এইচ এম সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া হাসপাতালে দিনে দিনে রোগীর চাপ বেড়েছে, বেডের সংখ্যাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। তবে কোনো জনবল বাড়েনি। করোনাকালীন রোগীর চাপ বেশি থাকায় হিমশিম খেতে হয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি আমাদের যা আছে তা দিয়ে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।

যেখানে মহামারি করোনার রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে সেটি একটি অসম্পূর্ণ ভবন জানিয়ে তিনি বলেন, ওখানে এখনো অনেক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যায়নি, তারপরও আপদকালীন সময়ে সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
এমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।