ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বহিরাগতদের দখলে সরকারি হাসপাতাল

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২১
বহিরাগতদের দখলে সরকারি হাসপাতাল

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ভিড় করছেন বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি ও রোগীদের সঙ্গে অনধিকার চর্চাই হচ্ছে তাদের প্রধান কাজ।

এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তি পোহালেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ  নীরব ভূমিকা পালন করছে।

রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকরা কোনো পরীক্ষার কথা লিখেছেন কি না- তা জানতে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন বহিরাহত লোকজন। জোর করেই রোগীদেরকে নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে চান তারা। এছাড়া চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ামাত্রই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর চারদিকে ভিড় করেন। প্রত্যেকে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে নেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের এমন আচরণে অনেকে, বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগীর স্বজনরা বিরক্ত হলেও এ থেকে রেহাই পান না কেউ। প্রায়ই তাদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের উচ্চ বাক্য বিনিময় হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হওয়ায় দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা এখানে বেশি আসেন। উপজেলার আরও প্রায় আড়াই লাখ মানুষও সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে এর আশপাশে অসংখ্য বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রতিনিধি দিনরাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকেন ও রোগীদের সঙ্গে অনধিকার চর্চা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে আসার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদেরকে ভাল সেবা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বাইরে নিয়ে যান। এমন ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছেন সন্তান সম্ভবা নারীরা। প্রয়োজন ছাড়াই তাদের অস্ত্রপচার করা হয় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে নিয়ে। বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

আদাঐর ইউনিয়নের মিঠাপুকুর গ্রামের রোজিনা খাতুন জানান, কয়েকদিন যাবত তিনি পেটের ব্যাথায় ভুগছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে বাইরে আসা মাত্রই এক লোক তার ব্যবস্থাপত্রটি টেনে নেন। সঙ্গে যেতে না চাইলেও তিনি জোর করে ব্যবস্থাপত্র টেনে নিয়ে যান। পরে টাকা নেই বললে তিনি সেটি রেখে অন্য রোগীর পেছনে ছুটতে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুরুষ রোগীর স্বজন জানান, জরুরি বিভাগ থেকে তাকে দ্রুত ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন আনতে বলা হয়। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর এক লোক ব্যবস্থাপত্র দেখতে চান। হাসপাতালের লোক ভেবে ব্যবস্থাপত্রটি তার হাতে দিলে আরও কয়েকজন এসে একেএকে ছবি তুলতে থাকেন। রোগীর মুমূর্ষু অবস্থা থাকা সত্ত্বেও এখানে অন্তত ৫ মিনিট বিলম্ব হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, বাইরে থেকে আসা দালালরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। রোগীরা প্রতিদিনই এদের মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও বিরক্তিকর আচরণ করেন।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম ইশতিয়াক মামুন বলেন, হাসপাতালে কিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি আসার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তারা যেন না আসতে পারে এ ব্যাপারে কর্মরতদের বলে দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।