বাগেরহাট: বাগেরহাটে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগী আসছে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ২০০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীই শিশু। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাত শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে জেলা হাসপাতাল ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, ৪ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৭ জন। এর মধ্যে ২৩ জনই শিশু রোগী। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় মেঝের পাশাপাশি হাসপাতালের নতুন ভবনের আইসোলেশন ওয়ার্ডের দুটি কক্ষে রাখা হয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর সুতালড়ি গ্রামের শিশু রেহানের মা পারভীন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার দুপুরে রেহানের জ্বর ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করানো হয়। পরে রাত দুইটার দিকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে রোববার সকালে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করি।
তিন দিন ধরে চার বছর বয়সী নাতি রোমানকে নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সদর উপজেলার বেসরগাতি এলাকার রুমিসা বেগম। তিনি বলেন, নাতি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। হাসপাতাল থেকে শুধু স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অন্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আগে জানতাম রোগীর ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দেয়। আমরা গরীব মানুষ। এতো ওষুধ কিভাবে কেনবো।
কচুয়া উপজেলার আফরা সাংদিয়া এলাকার হালিমা বেগম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘দুই দিন ধরে অনেক দাস্ত-বমি হচ্ছে পোতা রাহাতের। স্থানীয় ক্লিনিকে ডাক্তার দেখিয়েছি, কিন্তু কোন উপকার হয়নি। সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে এসে দেখি শুধু আমি না, আরও অনেক রোগী রয়েছে। ’
ডায়রিয়া আক্রান্ত দুই ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসা বাগেরহাট সদর উপজেলার বেতখালি এলাকার আল আমিন বলেন, ‘চারদিন আগে ছোট ছেলেকে ভর্তি করেছি ডায়রিয়া ওয়ার্ডে, দুইদিন থেকে চার বছর বয়সী বড় ছেলেরও দাস্ত-বমি হচ্ছে। গতকাল তাকেও ভর্তি করেছি হাসপাতালে। ’
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা আসমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শিফট অনুযায়ী আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিতসক ডা. সুদেব দেবনাথ বলেন, গত রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই পানি শূন্যতা নিয়ে ভর্তি হন। এছাড়া যেসব রোগীদের ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিবে তাদের বেশি করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্ধারিত ৪টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত ২০-২৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয় এখানে। আবার ১০-১৫ জন ভাল হয়ে ফিরেও যায় বাড়িতে। বিপুল পরিমাণ এই রোগীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধিও করেছি। এছাড়া নতুন ভবনের দুটি কক্ষ ডায়রিয়া রোগীদের জন্য বরাদ্দও দিয়েছি। এছাড়া সব ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য সব ধরণের ওষুধ, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার আরও বলেন, উপকূলীয় জেলা গুলোতে বর্তমান সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দাদেরও একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি পানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। সেই সঙ্গে সুস্থ মানুষদের বেশি বেশি তরল খাবার গ্রহন ও মাঝে মাঝে খাবার স্যালইন খেতে হবে। পাতলা পায়খানা ও বমির পরিমাণ বেশি হলে বাড়ি না থেকে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
এনটি