ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে রথযাত্রা উৎসব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
কলকাতায় মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে রথযাত্রা উৎসব কলকাতার রথযাত্রা

কলকাতা: হিন্দুশাস্ত্র মতে যিনি শ্রীকৃষ্ণ, তিনিই শ্রীরাম আবার তিনিই শ্রীজগন্নাথদেব। তাই জগন্নাথদেবের উপাসনার মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণেরই পূজা করা হয়। ভারতে সবচেয়ে বড় জগন্নাথদেবের মন্দির উড়িষ্যা রাজ্যের পুরীতে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের যেমন প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা তেমনি উড়িষ্যার হিন্দুদের প্রধান উৎসব রথযাত্রা। 

১৯৭২ সালের ১২ জুলাই পূজারি শ্রী প্রভুপাদের হাত ধরে শ্রীজগন্নাথদেব, শুভদ্রা ও বলরামের তিনটি পৃথক রথ প্রথম নামে কলকাতার রাজপথে। রথ তিনটি বের হয়েছিল এলবার্ট রোডের রাধাগোবিন্দ মন্দির থেকে।


 
শনিবার (১৪ জুলাই) ভারতসহ গোটা কলকাতায় উদযাপিত হচ্ছে রথযাত্রা উৎসব। পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, হুগলির মাহেশ ও গুপ্তিপাড়া থেকে শুরু করে কলকাতায় ইসকন আয়োজিত রথযাত্রায় ব্যাপক জনসমাগম হয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট শিশুদের মধ্যেও রথ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে সন্ধ্যার পর সুসজ্জিত ছোট ছোট রথ টেনে নিয়ে যাওয়ার আনন্দটা এখন ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে।  

পূজাপার্বনের রেওয়াজ শিশুরা না বুঝলেও তাদের খেলার মতো রথ তারা টানবেই। আর এই শিশুদের আগ্রহ তৈরি করে বাড়ির প্রবীণরা।  

ছোট রথ কিনছেন অনেকেকলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে লাল-নীল রঙে সাজানো শ’য়ে শ’য়ে রথ।

সুষ্ঠুভাবে রাজপথে রথযাত্রা সম্পন্ন করতে প্রতিবারই কোমর বেঁধে নেমে পড়ে রাজ্যের প্রশাসন বিভাগ। রথযাত্রা উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবন থেকে এক বার্তার মাধমে রাজ্যপাল জানান, এ রাজ্যে বহু বছর ধরে চলে আসছে রথযাত্রা। শাস্ত্রমতে জগন্নাথদেব এদিন মাসির বাড়ি যান। এই উপলক্ষে সারা রাজ্যে অসংখ্য মেলা বসে। সমাগম হয় ভক্তদের। এই উৎসবে জাতি, সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষ অংশ নেয়। সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা।
 
এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যে রথযাত্রা হোক। আমরা ধর্মের রথ আয়োজন করি, রাজনীতির রথ নয়। কেউ কেউ উৎসবের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি করতে চান। সেই বিভেদকামী শক্তিকে পরাস্ত করে আমরা চাই, রাজ্যে সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ রথযাত্রা হোক।

কলকাতায় সবচেয়ে বড় রথযাত্রার আয়োজন করে ইসকন। মুখ্যমন্ত্রী এই ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধন করেন প্রতিবছর।  
 
কথিত আছে, জগতের নাথ অর্থাৎ শ্রীজগন্নাথদেব বছরের ৩৫৮ দিন মন্দিরের গহ্বরে ভক্তদের পূজা নেন এবং বাকি সাতদিন রথযাত্রার মধ্য দিয়ে থাকেন ভক্তদের মাঝখানে। তার এক ঝলক দর্শন পাওয়ার জন্য শহরের রাজপথ হয়ে ওঠে লোকারণ্য।  

বলা হয়, শ্রীজগন্নাথদেব পূজায় বিশেষ বাহুল্য পছন্দ করেন না। তার পূজায় মাত্র চারটি জিনিস আবশ্যক। পত্রম, পুষ্পম, ফলম ও তোয়ম। অর্থাৎ শাকসবজি, ফুল, ফল ও দুধ দিয়ে তৈরি হয় প্রসাদ।
 
তবে কলকাতার এলবার্ট রোডের রাধাগোবিন্দ মন্দিরে জগন্নাথদেবের ভোগ থাকে অনেক প্রকারের। অন্নের মধ্যে থাকে পুষ্পান্ন, সবজি পোলাও, লেমন রাইস, নারকেল ভাত, দোধ্যধন ইত্যাদি। শাকসবজির মধ্যে থাকে শুক্তো, মালাইশাক, ছানা পালং কোপ্তা, পনির মহারানি, আলুসহ কাজু ভাজা, ছোলা ফুলকপির কারি ইত্যাদি। শেষ পাতে থাকে মিষ্টির আয়োজন। রসগোল্লা, সন্দেশ, গোলাপজাম, রসমালাই, বালুসাই, মালপোয়া, শুকনো হালুয়া, জাফরানি চিকন জিলিপি জাতীয় অসংখ্য মিষ্টি। পরে এগুলো প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
 
এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরসহ অনেকের বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ শ্রীজগন্নাথদেবের পূজা হয়। আর রথের কিছুদিন পরেই হবে জন্মাষ্টমী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ১৪ জুলাই, ২০১৮
ভিএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।