ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

এনআরসি নিয়ে বাংলার মানুষের মনে ত্রাস তৈরি করছে বিজেপি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
এনআরসি নিয়ে বাংলার মানুষের মনে ত্রাস তৈরি করছে বিজেপি 

কলকাতা: নাগরিকপঞ্জীকরণ (এনআরসি) নিয়ে পশ্চিমবাংলার মানুষকে সাহস জোগাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু যেন বাংলার মানুষের মনের আশঙ্কা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত এনআরসি আতঙ্কে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবুও বঙ্গ বিজেপি নেতাদের হঙ্কার শেষ হচ্ছে না। নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েই চলেছেন, ‘পশ্চিমবাংলাসহ গোটা দেশেই এনআরসি হবে।’

এ অবস্থায় ভারতের যে ভূখণ্ডে এনআরসি হয়েছে, সেই আসাম রাজ্যে তৃণমূল সুপ্রিমো মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টম্বর) টিম পাঠিয়েছেন পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে। দায়িত্ব পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নেতা সুখেন্দুশেখর রায় এবং দীনেশ ত্রিবেদীর ওপর।

এই দুই প্রবীণ নেতা আসামের নানা এলাকায় ঘুরেছেন। কথা বলেছেন, বহু লোকের সঙ্গে।  

সেখান থেকে সুখেন্দুশেখর জানিয়েছেন, ‘যে অবস্থা আমরা শুনতে পাই তার চেয়েও বেশি উদ্বেগজনক অবস্থা আসামে। এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না, পরিস্থিতি কতটা জটিল ও সমস্যাবহুল৷ যাদের নাম নাগরিকপঞ্জির তালিকায় থেকে বাদ পড়েছে, তারা আবেদন জানাতে পারবেন ঠিকই৷ তবে তার আগে তারা নোটিশ পাবেন। তার ১২০ দিনের মধ্যে আবেদন জানাতে হবে রাজ্যটির ধুবড়িতে গিয়ে। সেই আবেদনের শুনানি হবে বঙ্গাইগাঁওয় জেলায়। প্রান্তিক মানুষ, যারা এই চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন তারা ওই শুনানি শুনতে খরচ করে বঙ্গাইগাঁওয় পৌঁছাতে পারবেন কিনা জানা নেই’।

তবে সেখানকার সাধারণ মানুষের দাবি, যিনি যে অঞ্চলে আছেন সেই অঞ্চলে অর্থাৎ মহকুমাভিত্তিক আবেদন ও শুনানির ব্যবস্থা করা হোক। তবে মানুষের মধ্যে আরও একটি আশঙ্কাও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ওই দুই নেতা। ‘১৯ লাখ মানুষের মধ্যে প্রচুর প্রকৃত নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে। পাশাপাশি প্রচার হচ্ছে, ভুয়া নাম তালিকায় ঢুকেছে। এর থেকে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যাদের নাম নাগরিকপঞ্জিতে রয়েছে, ভবিষ্যতে বাদ পড়বে না তো?’

এই এনআরসি থেকে প্রায় ১১ লাখের বেশি হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে। এতে অবশ্য বিপাকে পড়েছে বিজেপি। এই অবস্থাতেই এনআরসির পরের প্রকৃত চিত্রটা পশ্চিমবঙ্গে মানুষের কাছে তুলে ধরতে আসামে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তারা এক সপ্তাহ আসামে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে রিপোর্ট পেশ করবেন। সেই রিপোর্ট পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির পক্ষে খুব যে স্বস্তির হবে না তা বোঝাই যাচ্ছে। আর সেটাই হয়ে উঠতে পারে বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জেতার অন্যতম হাতিয়ার।

তবে এই এনআরসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেখিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মমতার বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামে এনআরসি হয়েছে। এতে বিজেপির কোনো হাত নেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় মিছিল করছেন। রাজ্যে এনআরসি আতঙ্ক তৈরি করেছেন নিজেই। এই রাজ্যে এনআরসি আতঙ্কে মৃত্যুর কারণ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত।

এছাড়া এনআরসি নিয়ে বিজেপির আর এক সংসদ সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এনআরসিকে ব্যবহার করছে তৃণমূল। রাজ্যে এনআরসি আতঙ্ক তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।

যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এনআরসিকে ব্যবহার করছে বিজেপি। তারাই এনআরসি নিয়ে ত্রাস তৈরি করছে বাংলার মানুষের মনে। কিন্তু বিজেপি যাই করুক না কেনো পশ্চিমবাংলায় কোনোভাবেই এনআরসি হবে না। এনআরসি হতে দেবেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
ভিএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।