ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

নির্ঝর আনজুম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

**আমাদের চারপাশে অনেকেই রয়েছেন যারা নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেও উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছেন না। এর মূল কারন হলো, তারা যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, চাকরির বাজারে সেই বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের অভাব।

সুতরাং আমরা বুঝতে পারি, চাকরির বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পড়াশুনা অনেক মূল্যবান।

বর্তমান বিশ্বে আইটি একটি অতি জনপ্রিয় বিষয়, আর এই জনপ্রিয়তার কারলো হলো:
•    এ বিষয়ে পড়াশোনার বই ও উপাদানগুলো সহজলভ্য।
•    এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি চাকরি বাজারে প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
•    এ বিষয়ে ব্যবসা করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
•    শিক্ষা, চাকরি বা ব্যবসা করবার জন্য আইটি বিষয়ে জ্ঞান আর কম্পিউটারই যথেষ্ট।
•    এটিই একমাত্র পেশা, যে পেশায় ঘরে বসেও অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
•    এ পেশায় দেশে অবস্থান করেও বিদেশের কাজ করার মাধ্যমে প্রচুর উপার্জন সম্ভব।
•    আইটিতে কাজের বিভিন্ন ধরন থাকায় যেকোনো শিক্ষাগত বিভাগ, পেশা বা বয়সের মানুষ কোনো না কোনো ধরনের আইটি কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
•    আইটির কাজগুলো যেহেতু ব্যবহারিক কাজ, তাই নন-আইটি বিভাগ থেকেও একজন মানুষ আইটি বিষয়ে পড়াশুনা ও কাজ করতে করতেও অনেক দক্ষ হতে পারেন।

আইটি বিষয়ের কাজগুলো তিনভাবে করা যেতে পারে: ১. ফ্রিল্যান্সিং করে, ২. দেশের বাজারে চাকরি করে ও ৩. নিজে ব্যবসা করে।

এর মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং সব থেকে জনপ্রিয়, কারণ, দক্ষতার সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার মাধ্যমে একজন মানুষ চাকরির চেয়েও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। তাছাড়া, দক্ষতার সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং করার অভিজ্ঞতা থাকলে চাকনি পাওয়া বা ভবিষ্যতে নিজেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ব্যবসা শুরু করার অনেক সম্ভবনা থাকে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, সঠিক পথনির্দেশনা না পাওয়ায় আমাদের দেশে অনেকেই আইটি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে বার্থ হচ্ছেন বা অনেক সময় ও অর্থ অপচয় করেও হতাশ হয়ে এ পথ ছেড়ে দিচ্ছেন।

আমার লেখার ধারাবাহিক প্রকাশে আইটি, বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়ার সম্পর্কে আমি আলোচনা করবো।

কাজ বেছে নিন
আইটি ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করা খুব সহজ, ওয়েবসাইটে ক্লিক করে বা নিজের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ডিজিটাল অ্যাড দিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়- এমন বিভিন্ন ভুল ধারণা অনেকের মধ্যে রয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক এমন নানা ধরনের নন-আইটি কাজ শিখে কেউ কেউ অল্পকিছু উপার্জন করে ঠিকই, কিন্তু এ উপার্জন একটি সীমায় এসে আর উঠতে পারে না। অনেকসময় এমন কাজ শিখে সময় ও অর্থ পুরোটাই বিফলে যায়।

আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের সব থেকে লাভজনক কাজগুলোর কথা যদি বলা হয়, তাহলে প্রথম সারিতে আসে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওয়েবসাইট বা ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরির কাজ) ও গ্রাফিক্স ডিজাইনিং (ডিজিটাল ইমেজের কাজ)।

এ কাজগুলো শেখা যে কারণে লাভজনক:
•    এই শিক্ষাগুলো এমন নয় যে কদিন পর অচল হয়ে যাবে, বরং এসবের বাজার চাহিদা সবসময় থাকবে।
•    ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে এই কাজের পরিমাণ ও পারিশ্রমিক অন্য কাজের তুলনায় উভয়ই অনেক বেশি।
•    এই কাজগুলো শিখে আপনি শুধু অনলাইনেই নয়, বরং লোকাল মার্কেটেও কাজ পেতে পারেন।

কী কী শিখবেন

গ্রাফিক্স ডিজাইন
গ্রাফিক্স ডিজাইন বলতে সহজ ভাষায় ইমেজ কন্টেন্ট ডিজাইনিং, এডিটিং, কাস্টমাইজেশন- এগুলোকে বুঝানো হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনের মধ্যে লোগো, লিফলেট, ব্রসিয়ার, ব্যানার, পেপার প্রিন্টিং কন্টেন্ট ডিজাইন করা বা ওয়েবপেজের জন্য ইমেজ কন্টেন্ট তৈরি করাকে বোঝানো হয়।

ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল মার্কেটে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। যারা প্রোগ্রামিং করতে আগ্রহী নন, বা নিজেকে দুর্বল মনে করেন বলে কাজ করতে চান না, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার পেশা হতে পারে, যদি তাদের মোটামুটি কালার ও স্টাইল সম্পর্কে ধারণা থাকে।

এ ধরনের কাজের জন্য একজন ব্যক্তিকে অন্তত নিম্নের আপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে।
•    অ্যাডোবি ফটোশপ
•    অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর

ওয়েব ডিজাইন
ওয়েব ডিজাইন বলতে সাধারণ ভাষায় ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের জন্য পেজ ডিজাইন করাকে বোঝানো হয়। বর্তমানে সমস্ত সফটওয়্যার ও বিজনেসই ওয়েবভিত্তিক। তাই ভালো ওয়েবসাইট ডিজাইনারের খুবই চাহিদা রয়েছে। একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে অন্তত প্রথমে যা শিখতে হবে তা হলো-

•    এইচটিএমএল- ডিজাইনিং ল্যাঙ্গুয়েজ
•    সিএসএস- স্টাইলিং ল্যাঙ্গুয়েজ
•    বুটস্ট্রাপ- সিএসএসের একটি ফ্রেমওয়ার্ক
•    জাভাস্ক্রিপ্ট- ব্রাউজার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ
•    জেকুয়েরি- জাভাস্ক্রিপ্টের একটি ফ্রেমওয়ার্ক
•    অ্যাডোবি ফটোশপ- ইমেজ এডিটর

ওয়েবসাইটের পেজ বা টেমপ্লেট তৈরি করে তা অনলাইনে বিক্রি করার মাধ্যমে, আবার ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল মার্কেটে ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইটের ডিজাইনের কাজ করে দিয়ে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাইতে তুলনামুলকভাবে বেশি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব এ ধরনের কাজ করার মাধ্যমে। এ ধরনের কাজ শেখার আগে কিছুটা কম্পিউটার চালানো ও ইন্টারনেট ব্রাউজ করার অভিজ্ঞতা থাকা ভালো।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলতে মূলত ওয়েব-সাইট ও ওয়েব-অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা উভয়ই বুঝানো হয়। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ভিতরে ওয়েব ডিজাইন এর অংশ তো থাকেই, কিন্তু সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে থাকে প্রোগ্রামিং। একটি ওয়েবসাইট বা একটি ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন/সফটওয়্যার কিভাবে কাজ করবে (ইউজারের রিকোয়েস্ট/কমান্ডের উপর ভিত্তি করে ফলাফল দেবে) সেগুলো কম্পিউটারের ভাষার দিয়ে তৈরি করাই মূলত প্রোগ্রামিং।

ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে মোটামুটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটের সবচেয়ে দক্ষ ও অর্থ উপার্জনকারী ক্ষেত্র বলা যেতে পারে। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে গেলে কম্পিউটার চালানো ও ইন্টারনেট ব্রাউজ করার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইনিংয়ের মোটামুটি কাজ শিখে নেওয়া ভালো, এতে প্রোগ্রামিং শেখা তাদের জন্য বেশ সহজ হয়ে যাবে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করার নানা ভাষা রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা হল পিএইচপি। এর কারণ হলো, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটের কাজগুলো লক্ষ্য করেন, দেখবেন- মোটামুটি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কাজ পিএইচপিভিত্তিক। ‘পিএইচপি’ এর সঙ্গে আপনাকে ‘মাইএসকিউএল’ শিখতে হবে ওয়েবভিত্তিক সাইট/সফটওয়ারের ডাটা নিয়ে কাজ করার জন্য।

আর, পিএইচপি/মাইএসকিউএল শেখার সবচেয়ে লাভ হলো, অল্পসময়ে ওয়েব পোর্টাল, ই-কমার্স সাইট, ফোরাম, ব্লগ, ক্লাসিফাইড অ্যাড'স সাইট ইত্যাদি তৈরি করার জন্য যেসব ওয়েব আপ্লিকেশন রয়েছে তার ৯০ ভাগই পিএইচপি আর মাইএসকিউএল দিয়ে তৈরি। যেমন, ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ওপেনকার্ট, ম্যাজেন্টো, পিএইচপিবিবি, ওএসক্লাস।

আপনি যদি পিএইচপি ও মাইএসকিউএল ভালো করে রপ্ত করতে পারেন, তাহলে আপনি শুধু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কেন, দেশি মার্কেটে অনায়াসে চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবেন। আর এজন্য আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সফটওয়্যার যেহেতু এক ধরণের প্রকৌশল, এখানে ব্যবহারিক চর্চার মাধ্যমে আপনি নিজের দক্ষতাকে অনায়াসেই গড়ে তুলতে পারেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক তরুণ-তরুণী ওয়েব টেকনোলোজি রপ্ত করে নন-আইটি বাকগ্রাউন্ড থেকে পড়াশুনা করে এসেও অনেক ভালো করছেন। শুধু প্রয়োজন চেষ্টা, দৈনিক চর্চা আর ধৈর্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা আইটিতে এসে বিফল হন তাদের লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তারা একটু এগিয়ে একবার বিফল হলেই সঙ্গে সঙ্গে পিছপা হন। ধৈর্য নিয়ে ছয় থেকে আট মাস কঠোর পরিশ্রম করলে এটি নিশ্চিত যে, তাকে আর বেকার বসে থাকার প্রয়োজন পড়বে না।

আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে করতে যখন আপনার পোর্টফলিও বড় করে তুলবেন, তখন লোকাল মার্কেটেও ভালো চাকরি বা ব্যবসা করার সুযোগও খুলে যাবে আপনার সামনে।

নির্ঝর আনজুম
ফ্যাকাল্টি প্রধান, পিপলএন্ডটেক ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলোজি ও স্পেশালিস্ট, এসএসএল ওয়্যারলেস।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।