চীনের রাজনীতিতে যাদের ভবিষ্যৎ নেতা বা উদীয়মান তারকা হিসাবে দেখা হচ্ছিল, তার মধ্যে অন্যতম সদ্য অপসারিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন স্বয়ং শি জিনপিং।
কিন গ্যাংয়ের অপসারণ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে শোরগোল তৈরি হলেও, চীনে গতানুগতিক নীরবতার মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে খুব কম তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে।
গেল জুন মাস থেকে কিনকে সরকারি কোনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে তার স্বাস্থ্যগত জটিলতার কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পার হওয়ার পরেও যখন তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না, তখন ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার তৈরি হয়েছিল যে, রাজনৈতিক কোনো কারণে হয়তো তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে যে, একজন টেলিভিশন উপস্থাপিকার সাথে কিনের প্রেমের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ওই উপস্থাপিকাও হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যান।
চীনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন, এমন কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করেন, একই সময়ে এই দুটি ঘটনার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে, কমিউনিস্ট পার্টিতে বিরোধী পক্ষ নৈতিক স্খলন দেখিয়ে কিন গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ ধরনের সম্পর্ক থাকাটা চীনে বেআইনি নয়, কিন্তু একে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসাবে দেখা হতে পারে। আবার স্বাস্থ্যগত জটিলতার যে কথা বলা হয়েছে, সেটাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
আসলে কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চীনের শাসন ব্যবস্থার অস্বচ্ছতার কারণে এসব সম্ভাবনার কথা যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, আবার একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।
কিন গ্যাংয়ের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সবাই অবাক হয়েছে এই কারণে যে, তার পেছনে চীনের সব ক্ষমতাবান ব্যক্তির সমর্থন আছে বলে মনে করা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করার সময় তাকে ফিরিয়ে এনে গেল বছরের শেষ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা শি জিনপিং।
এরপর থেকে বিশ্লেষকরা তার দিকে নজর রাখছিলেন যে, নতুন দায়িত্বে তিনি কতটা কঠোর বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হয়ে উঠতে পারেন।
চীনের কূটনীতিকদের একটি দলকে পশ্চিমারা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ বলে বর্ণনা করে থাকে, যারা চীনের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। চীনের দিক থেকে মনোযোগ সরাতে যদি কাউকে গালি দেয়ারও দরকার হয়, তাতেও তারা পিছপা হন না।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে যখন কিন গ্যাং কাজ করতেন, সেই সময় থেকে চীনের সমর্থনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। সেই সঙ্গে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন, যিনি অন্যদের আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেন। ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে সক্ষমতার কারণে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে উঠেছিলেন।
উৎসাহী ক্রীড়া অনুরাগী কিন গ্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রে এনবিএ খেলার সময় ফ্রি থ্রো লাইন থেকে শট নিতে দেখা যায়। অথবা তার আগে যুক্তরাজ্যে দায়িত্ব পালনের সময় তার প্রিয় দল আর্সেনালের পক্ষে উল্লাস করতে দেখা যায়। হয়তো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কোন কোন নেতা এ ধরনের ব্যক্তিকে যথেষ্ট কঠোর বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ বলে মনে করছেন না।
তার সঙ্গে যতবার বিবিসি সংবাদদাতার দেখা হয়েছে, ততবার তিনি অত্যন্ত জোরের সঙ্গে নিজের দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং অন্যদের কাছে যতটা সম্ভব ভালোভাবে দেশকে উপস্থাপন করেছেন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির যে ধরনের আধুনিক, মার্জিত কর্মী দরকার ছিল, তিনি সেরকম একজন বলেই মনে করা হচ্ছিল, যাকে তারা নানাভাবে ব্যবহার করা যেত।
এখন কিন গ্যাংয়ের ভাগ্যে কী ঘটবে, তা কারো জানা নেই। তার সম্পর্কিত তথ্য এর মধ্যেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। একে যেভাবেই নেয়া হোক না কেন, এর ফল ভালো হতে পারে পারে না।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
আরএইচ