ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মধ্যস্থতাকারী হতে চায় চীন, আরব লীগের সঙ্গে বৈঠক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
মধ্যস্থতাকারী হতে চায় চীন, আরব লীগের সঙ্গে বৈঠক

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বেইজিং। এরইমধ্যে আরব লীগের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মধ্যেপ্রাচ্যে নিযুক্ত চীনের বিশেষ দূত।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত চীনের বিশেষ দূত ঝাই জুন শুক্রবার বেইজিংয়ে ২২ সদস্যের আরব ব্লকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে, যা ইসরায়েলের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৭২৪ শিশুসহ ২২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আহত হয়েছেন ৯ হাজারের কাছাকাছি।  

ঝাই আরব রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, চীন গাজায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে।  

এতে আরও বলা হয়, ঝাই ফিলিস্তিন সংকটের ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে’ চীনের দীর্ঘদিনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

আরব লীগ বলেছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে চীন ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ অব্যাহত রাখবে বলে তারা আশা করছে।

মিশরের রাজধানী কায়রোতে আরব লীগের সদর দপ্তরে এক জরুরি অধিবেশনে আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানানোর দু’দিন পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বুধবারের বৈঠকে মন্ত্রীরা বলেন, শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন এবং ইসরায়েলের মধ্যে কার্যকর আলোচনা শুরু করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।  

এছাড়া গাজায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধের অন্যায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় অবিলম্বে খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থানরত প্রায় ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে সম্ভাব্য স্থল আক্রমণের আগে দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। এর নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার সৌদি আরব নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অব্যাহত হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

সৌদি আরব হামাসের নিন্দা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, চলমান সংঘাতের কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাওয়ার উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে।

অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, হামাসের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় তারা মর্মাহত। ১৯৭৯ সালে মিশর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডানের পর ২০২০ সালে এটি ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য প্রথম উপসাগরীয় দেশ এবং তৃতীয় আরব দেশ হয়ে ওঠে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন প্রকাশ্যে উভয় পক্ষের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা এড়িয়ে গেছে, তবে গত সপ্তাহে চীনা কূটনীতিকদের বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, যে তারা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করার চেষ্টা করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীনের ভূমিকা জোরদার হয়েছে গত মার্চে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে মধ্যস্থতার পর।

বেশ কয়েকটি আরব দেশে রাষ্ট্রদূত এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ঝাই গত কয়েকদিনে ফিলিস্তিনি, মিশরীয়, ইসরায়েলি ও সৌদি কূটনীতিকদের সঙ্গে পৃথক ফোনালাপ করেছেন।

মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফিলিস্তিন বিভাগের সহকারী মন্ত্রী ওসামা খেদারের সঙ্গে মঙ্গলবার টেলিফোনে ঝাই বলেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় চীন মিশরের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।

মিশর ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিল এবং ১৯৭৯ সালে ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম আরব দেশ ছিল।

পরের দিন ঝাই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাল জাদুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাকে বলেন যে চীন যুদ্ধ এবং হতাহতের খবরে গভীরভাবে শোকাহত। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের সঙ্গে চীনের প্রথম জনসমক্ষে যোগাযোগের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার ঝাই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। ঝাই ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপ-পরিচালক রাফি হারপাজকে বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে চীনের কোনো স্বার্থ নেই এবং তারা সবসময় শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে রয়েছে।

একই দিন ঝাই একজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কূটনীতিককে বলেন, চীন সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে সমন্বয় করতে ইচ্ছুক।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তার প্রথম বিবৃতি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনালাপে ওয়াং ফিলিস্তিনি জাতির বৈধ অধিকার আদায়ের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার হয়নি।

শুক্রবার বেইজিংয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়াং একই ধরনের মন্তব্য করেন।  

ওয়াং আরও বলেন, চীন শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে তার বিশেষ দূত পাঠাবে, যাতে তারা জাতিসংঘের চ্যানেলের মাধ্যমে গাজা ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান করতে পারে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী হামাসের কাছে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনা করে। চীন দীর্ঘদিন ধরে গাজা ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি এলাকায় সহায়তা দিয়ে আসছে।

২০২১ সালের মার্চ মাসে চীন ফিলিস্তিনিদের জন্য এক লাখ ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাঠায় এবং মিশরের সঙ্গে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিয়ে গাজায় পাঁচ লাখ ডোজ পাঠানোর জন্য কাজ করে।

গত জুনে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, বেইজিং ফিলিস্তিনে ৪০টিরও বেশি নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।