২০১৩ সালের জুন মাসে ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর সি লাহোটি সুপ্রিম কোর্টকে একটি চিঠি দিয়ে ভারতের কারাগারগুলোতে বন্দিদের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ সেখানকার বেহাল পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন। রাজ্যগুলো যে বন্দিদের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না, সে বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।
এই চিঠির ভিত্তিতেই সে বছর জুলাই মাসে জনস্বার্থে একটি ‘রিট পিটিশন’ দায়ের হয় এবং আইনজীবী তাপস ভঞ্জকে নিয়োগ দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের জেল এবং সংশোধনাগার গুলোর অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরির উদ্দেশ্যে।
রাজ্যটির কারাগারগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা এই আইনজীবী এই মাসের শুরুর দিকে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ জেলা প্রশাসন এবং কারা বিভাগের আইজিসহ আমরা আলিপুর সংশোধনাগার পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সে সময় এক নারী বন্দিকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেখা যায়। আলিপুর নারী কারাগারে ১৫জন শিশু তাদের মায়ের সঙ্গে রয়েছে, যাদের মধ্যে সাত জন স্কুলে পড়ে এবং আট জন কারাগারেই পড়াশোনা করে। একাধিক নারী কারাগারের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভাল নয় এবং তা ক্রমশ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪০০ জন নারী বন্দি ছিলেন, এই সংখ্যা কারাগারটির ধারণক্ষমতার অধিক হওয়ায়, সেখান থেকে ৯০ জনকে আলিপুর নারী সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করা হয়।
এই বন্দিরা জেলে এসে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন কিনা এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভঞ্জ বিবিসিকে জানান, এদের মধ্যে কেউ কেউ জেলের কর্মীদের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, এমনটা হতেই পারে। সেই কারণে আমি সুপারিশ করেছি, সংশোধনাগারে ঢোকার আগে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা হোক।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন জেল নিয়ে কাজ করার কারণে আমার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। জেলে থাকা নারীরা আমাকে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। একবার কারা বিভাগের কর্মীর স্ত্রী তার চিঠিতে এই ঘটনায় কর্মীদের যুক্ত থাকার কথাও জানিয়েছিলেন।
ভঞ্জ বলেন, ২০০০ সালে মূক ও বধির একটি মেয়েকে প্রিজন ভ্যানে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, জেলে ফেরার পর জেল সুপার লক্ষ্য করেন বন্দিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আলিপুর থানায় ডায়েরি করেন জেল সুপার। তিনি অভিযোগ করেন প্রিজন ভ্যানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ১০-১১ বছর জেলে খাটে। পরে তারা জানায় কারাগারেই ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সেখানে সে একটি সন্তানের জন্মও দিয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, সেই ঘটনা কিন্তু নতুন নয়।
এই সমস্যাগুলি থেকে রেহাই পেতে কয়েকটি সুপারিশ করেছেন মি. ভঞ্জ। কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছেঃ
- কারাগারে প্রবেশের আগে প্রেগনেন্সি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক।
- নারী বন্দিরা যেখানে থাকেন সেখানে কারা বিভাগের পুরুষ কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক।
- মৃত বন্দিদের দেহের ময়না তদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
এমএম