ঢাকা: গত সোমবার (২৩ মার্চ) সিঙ্গাপুরসহ পুরো বিশ্বকে শোকে ভাসিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন দেশটির জনক ৯১ বছর বয়সী লি কুয়ান ইউ।
১৯৬৫ সালে যখন সিঙ্গপুর স্বাধীন হয়, তারপরই দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন লি কুয়ান।
তবে লি কুয়ানের এই যাত্রা মোটেই সরল ছিল না। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন স্থান করে নেওয়া সিঙ্গাপুরকে আলোয় ভরে দিতে তাকে কিছু কঠোর ও ব্যতিক্রমধর্মী কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়, যে কারণে সে সময় তিনি সমালোচিতও হন।
তবে লি কুয়ানের সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্তে সিঙ্গাপুর যখন সাফল্যের শীর্ষে, তখন সেসব সমালোচনা আর ধোপে টেকেনি।
লি কুয়ান ইউয়ের নেওয়া ব্যতিক্রম কিছু পদক্ষেপের মধ্যে একটি হলো সিঙ্গাপুরে চুইংগাম নিষিদ্ধকরণ। ১৯৯২ সালে দেশটিতে চুইংগাম শুধু নিষিদ্ধই হয়নি, এর উৎপাদনসহ চুইংগাম সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসা-বাণিজ্যও নিষিদ্ধ করা হয় সেসময়।
তখন সিঙ্গাপুরের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লি কুয়ান। ১৯৯০ সালের ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর একইদিন তিনি সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি সিনিয়র মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে পুরোপুরি অবসরে যান।
মার্কিন লেখক টম প্লেটকে এক সাক্ষাৎকারে লি কুয়ান প্রথম ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন সিঙ্গাপুরে চুইংগাম নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
টম প্লেটকে তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে ১৯৯২ সালের দিকে চুইংগামের দৌরাত্ম্য এত বেশি বেড়ে যায় যে, জনগণ এটি চিবিয়ে যত্রতত্র ফেলে রাখতো। মজা করতে লাগিয়ে দিত অফিসের চেয়ার, টেবিল ও দরজায়। চাবির ফুটোকেও তারা রেহাই দেয়নি। সেই সঙ্গে লিফটের বোতাম, সাবওয়ে ট্রেনের দরজাসহ বিভিন্ন দেয়ালেও লাগিয়ে রাখতো আধ চিবানো চুইংগামের আঠা।
লি কোয়ান আরো বলেন, আমি নিজেও চুইংগাম চিবুতে পছন্দ করতাম। কিন্তু মানুষ যে হারে পরিবেশ নোংরা করছিলো, তা ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। ফেলে রাখা চুইংগামের আঠা পরিষ্কার করতে রীতিমত গলদঘর্ম হতে হচ্ছিল সে সময় কর্তৃপক্ষকে। লাখ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার খরচ হয়ে যাচ্ছিলো সব ঠিক রাখতে।
শেষে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে আইন করে চুইংগাম নিষিদ্ধ করে সিঙ্গাপুর সরকার, যা আজও বহাল রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫