ঢাকা: ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তেহরান ও ছয় বিশ্বশক্তি। সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে আট দিন ধরে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সমঝোতায় পৌছান।
এর আগে গত সোমবার (৩০ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের লুসান শহরে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত হতে চলা পরমাণু চুক্তির প্রাথমিক ধাপের শেষ পর্যায়ে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরভ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) আলোচনার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা আরো কিছু সময় চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বুধবারও (০১ এপ্রিল) কোনো ফলাফল না এলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল) পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে এক মত হওয়ার ঘোষণা আসার পরই ওই বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি হতে চলেছে।
‘বিশ্বাস’ নয়, ‘নিখুঁত পরীক্ষা’র ভিত্তিতেই চুক্তিটি হতে চলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি ইরান প্রতারণা করে, তাহলে তা বিশ্ববাসী জানবে।
চুক্তিটি সম্পাদিত হলে ইরানকে তার সেন্ট্রিফিউজের সংথ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলতে হবে। সেন্ট্রিফিউজ ইউরেনিয়াম পরিশোধন ও পারমানবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সেই সঙ্গে দেশটিকে তার শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নতুন করে সাজাতে হবে, যাতে প্লুটোনিয়াম ব্যবহারে কোনো অস্ত্র তৈরি করা না যায়। এছাড়া আগামী পনের বছরের জন্য ইউরেনিয়ামের মজুদ তিন দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি করা যাবে না বলেও সীমাবদ্ধতা তৈরি করে দেওয়া হবে। এই পরিমাণের বেশি ইউরেনিয়ামের মজুদ যে দেশেরই থাকে, তার পক্ষেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।
অন্যদিকে, চুক্তি সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে পরমাণু ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে।
ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির এই চুক্তি সম্পাদনে আগামী ৩০ জুনকে শেষ সীমা হিসেবে ধরা হয়েছে।
এদিকে, বৈঠক সফল হওয়ার ঘোষণা আসার পরপরই উল্লাসে ইরানি জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আসে বলে জানা গেছে।
তবে এই আলোচনা সফলে মোটেও খুশি হতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বন্ধু রাষ্ট্র ইসরায়েল। তারা এ চুক্তিকে ইরানকে প্রশ্রয় ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবেই দেখছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৫