ঢাকা: ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে ছয় বিশ্ব শক্তির বৈঠক সফল হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরপরই উল্লাসে ফেঁটে পড়েন ইরানের জনগণ। মধ্যরাতেই দলে দলে রাজধানী তেহরানের বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেন।
সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে আট দিন ধরে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সমঝোতায় পৌছান।
সমঝোতার আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তারা সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ১৯ হাজার থেকে কমিয়ে ছয় হাজারে নামাবে। এছাড়া ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে আনতেও সম্মত হয়েছে ইরান।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকেরা সেন্ট্রিফিউজ ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অবকাঠামোগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারবে নিয়মিত।
এসব ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (৩০ মার্চ) লুসান শহরে ইরানের সাথে সম্পাদিত হতে চলা পরমাণু চুক্তির প্রাথমিক ধাপের শেষ পর্যায়ে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরভ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) আলোচনার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা আরো কিছু সময় চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বুধবারও (০১ এপ্রিল) কোনো ফলাফল না এলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল) পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
এই চুক্তি তাদের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনেক ইরানীয়। ঘোষণা আসার পরপরই তেহরানের রাজপথে থাকা গাড়ির চালকরা একটানা হর্ন বাজিয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। স্থানীয় সময় রাত ১টার সময়ও রাজধানীর সবচেয়ে বড় সড়ক ভাল-ই-আসরে লেগে থাকে বিশাল যানজট। সেই সঙ্গে রাজপথে থাকা নারী-পুরুষের বেশিরভাগই ইরানের জাতীয় পতাকা হাতে ‘জয়সূচক’ চিহ্ন দেখাতে থাকে।
ভাল-ই-আসর রোডে উচ্ছ্বাসরত বেহরান আলভি নামে একজন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চূড়ান্ত ফলাফল যাই আসুক, আমরাই বিজয়ী। এবার আমরা বাকি বিশ্বের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবো।
আলোচনা সফল হওয়া প্রসঙ্গে ‘শীত শেষ’ লেখা একটি পোস্টটি ইরানের সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
৩৪ বছর বয়স্ক তেহরানের বাসিন্দা আলি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই সফলতা আমাদের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করবে। এর আগের পরিস্থিতিটা এমন ছিল, যেন কেউ আমার শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থাটাকেই রুদ্ধ করে রেখেছিল। এখন আমরা শ্বাস নিতে পারবো। সবাই খুশি। এই সময়টার জন্য আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করেছি।
২০১২ সালে পরমাণু ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইরানের ওপর মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটি থেকে তেল ক্রয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে ডলারের বিপরীতে ইরানের মুদ্রা ‘রিয়ালের’ মান কমে যায় বিশ্ববাজারে।
সংকট নিরসনের ফলে এখন রিয়ালের মান শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ইরানের স্টক মার্কেটেও দারুন প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি শনিবার (০৪ এপ্রিল) স্টক মার্কেট খোলার পরপরই এর প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৫
** ইরানের সাথে চুক্তিতে সম্মত বিশ্বশক্তির ৬ দেশ