ঢাকা: দীর্ঘ ছাপ্পান্ন বছর পর এক টেবিলে বসলেন যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার নেতারা। দু’দেশের প্রেসিডেন্টের ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠকের আগে এক টেবিলে বসে ইতিহাসের প্রথম ধাপ রচনা করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও কিউবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় কেরি ও রদ্রিগেজ এ বৈঠক করেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়। বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর করমর্দনের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টে।
১৯৫৮ সালে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর আগে দু’দেশের মধ্যকার সবশেষ কূটনৈতিক আলাপের পর বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হলো।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ এপ্রিল) ও শনিবার (১১ এপ্রিল) ৩৫ জাতির ‘সামিট অব দ্য আমেরিকাস’য়ে যোগ দিতে এরই মধ্যে পানামা পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো।
এবারই প্রথম আমেরিকা মহাদেশের সবগুলো রাষ্ট্র সম্মেলনে উপস্থিত থাকছে বিধায় এই সম্মেলনকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিচ্ছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম।
এদিকে, এ সম্মেলনে যোগদানের আগে আরেকটি সংবাদ দিয়েছে মার্কিন পত্রিকাগুলো। তারা জানিয়েছে, কিউবাকে ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশ দুই দেশের মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্কে খানিকটা উষ্ণতা ছড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে দু’দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালের পর আর কখনও মুখোমুখি হননি দুই দেশের নেতারা। ১৯৬১ সালে দেশটিতে দূতাবাস বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ১৯৮২ সালে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কিউবাকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কালো তালিকাভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় কিউবাই প্রথম কোনো রাষ্ট্র।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির নেতৃস্থানীয় সিনেটর বেন কার্ডিন বলেন, এই পদক্ষেপ কিউবার সঙ্গে ফলপ্রসূ সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে, পানামা যাওয়ার পথে জ্যামাইকা সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন, কালো তালিকাভুক্ত কিউবার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিশ্লেষণের কথা সরকারকে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কালো তালিকা’ভুক্ত হওয়ার কারণে কিউবাকে এতোদিন অর্থনৈতিক ও অস্ত্র রফতানির ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকতে হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থঋণের বিষয়ে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, পানামা সম্মেলনেই কিউবাকে ‘কালো তালিকা’ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৫
আরএইচ/এইচএ