ঢাকা: সরকার উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ‘অভ্যুত্থান’ ঘোষণার মধ্যেই দেশে ফিরছেন বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট পিয়েরে এনকুরুনজিজা। ‘অভ্যুত্থান’ ঘোষণার সময় তানজানিয়ায় অবস্থানরত এনকুরুনজিজা ইতোমধ্যে দেশের উদ্দেশে রওয়ানাও হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্টের প্রেস উইং।
বুধবার (১৩ মে) রাজধানী বুজুম্বুরার একটি সামরিক ঘাঁটিতে অভ্যুত্থান ঘোষণা করেন গোডফ্রয়েড নিয়োমবারেহ নামে এক মেজর জেনারেল। তার অভ্যুত্থান ঘোষণার সময় তানজানিয়ায় একটি সম্মেলনে ছিলেন প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজিজা।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রচারিত জরুরি ভাষণে নিয়োমবারেহ জানান, এনকুরুনজিজার তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণায় সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট দূর করতে ‘সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা’ তাকে ‘পদচ্যুত’ করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে বলেন, আমরা আর এনকুরুনজিজার আনুগত্য মানছি না, কারণ তার তৃতীয় দফায় নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা সংবিধান লঙ্ঘন। ...এনকুরুনজিজার সরকারকে উৎখাত করা হলো।
তবে, অভ্যুত্থান ঘোষণাকারী নিয়োমবারেহের পক্ষে কেমন সমর্থন রয়েছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। যদিও অভ্যুত্থান ঘোষণার আগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন ঘেরাও করে ফেলে তার অনুগত সেনা সদস্যরা।
নিয়োমবারেহ জানান, অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয় মুক্তি কমিটি (ন্যাশনাল স্যালভেশন কমিটি) গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে পাঁচজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, নিয়োমবারেহ যখন অভ্যুত্থান ঘোষণা করছিলেন, প্রেসিডেন্ট এনকুরুজিজা তখন পার্শ্ববর্তী দেশ তানজানিয়ায় একটি সম্মেলনে ছিলেন। সেখানে তিনি নিজের তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছিলেন।
এ সুযোগে সেনাবাহিনীর ‘অভ্যুত্থান’কে নাকচ করে দিয়ে এটাকে নিছকই ‘কৌতুক’ বলে আখ্যা দেন প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা।
সেনাবাহিনী ওই জেনারেলের অভ্যুত্থান ঘোষণায় পুরো রাজধানী প্রায় পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে বলে জানায় সংবাদমাধ্যম। এমনকি এতোদিন ধরে এনরুকুনজিজার নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণার বিরোধিতা করে আসা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অভ্যুত্থান ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করে বলেও জানায় সংবাদমাধ্যম।
তবে, অভ্যুত্থান ঘোষণার ঘণ্টা কয়েক পরই প্রেসিডেন্টের প্রেস উইং থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে, সে অপচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরছেন। তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। একইসঙ্গে দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
তবে, প্রেসিডেন্ট কীভাবে কোন পথে দেশে ফিরছেন সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি তার প্রেস উইং।
এনকুরুনজিজার প্রেস উইং বিবৃতি দেওয়ার পর অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সীমান্তে এবং সবগুলো বন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সিপাহী-জনতাকে এক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ বুরুন্ডিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। দুই দফায় দায়িত্ব পালনের পর তৃতীয় দফায়ও প্রেসিডেন্ট এনরুকুনজিজা দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিলে এ সংকটের শুরু হয়। এ সংকটকালে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হানাহানির মুখে গত কয়েক সপ্তাহে প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে দশ হাজারেরও বেশি বুরুন্ডিয়ান।
** বুরুন্ডিতে সেনা অভ্যুত্থান!
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
এইচএ