ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মানবপাচারে অভিযুক্ত জেনারেলের পাশে থাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৫
মানবপাচারে অভিযুক্ত জেনারেলের পাশে থাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মানবপাচার বন্ধে যখন আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমাধানের পথ খুঁজে পেতে মরিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, ঠিক তখনই এই অভিযোগে অভিযুক্ত থাই তিন তারকা জেনারেলের পাশে দাঁড়ালেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়িত উংসুয়োন।

ঊর্ধতন সেনা উপদেষ্টা লেফটেনেন্টে জেনারেল মানাস কংপ্যানকে মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার (০৩ জুন) সকালে তার জামিনও বাতিল করে দিয়েছে থাই পুলিশ। সেই তিন তারকা জেনারেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন থাই উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রয়িত উংসুয়োন বলেন, থাই জেনারেল তার কর্মজীবনে দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন।

তিনি বলেন, লেফটেনেন্ট জেনারেল মানাসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা তদন্ত করতে অনেক বছর পেছনে যেতে হবে। কর্মজীবনের প্রথমদিকে তিনি যখন রেনংয়ে অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বাহিনীর অঞ্চল-৪ এ ছিলেন, তখন থেকে তদন্ত করতে হবে। তখন তিনি কর্নেল পদের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। এটা অনেক সময়ের ব্যাপার।

প্রয়িত আরও বলেন, থাই সেনাবাহিনীতে জেনারেল মানাসের কর্তব্যের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কিত নয়। যতদূর আমি জানি, জেনারেল কঠোর পরিশ্রমী ও দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।

থাই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেনা ইউনিফর্ম পরেই বুধবার জেনারেল মানাস থাই পুলিশ প্রধান সমইয়ত পুমপুনমুয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত ৩১ মে মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে পুলিশ।

জেনারেল মানাসের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে,  পাচারকারীদের সঙ্গে গোপন যোগসাজশ, মানবপাচারে অনৈতিক সহায়তা দেওয়া ও পাচারের শিকার অভিবাসীদের মুক্তিপণের জন্য বন্দি করে রাখা।

তবে লেফটেনেন্ট জেনারেল মানাস তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে থাই পুলিশের উপ-প্রধান আয়েক অংসানন্ট।

আয়েক অংসানন্ট জানান, জেনারেল মানাসকে ৪৮ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে রাখার পর না-থাওই আদালতে তার বিরুদ্ধে আটকাদেশ চাওয়া হবে।

আয়েক আরও জানান, নিজের জেনারেল ৠাংক গ্যারান্টি হিসেবে উপস্থাপন করে মানাস হয়তো তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে জামিন চাইবেন। এ ব্যাপারে তার অধিকার আছে।

এদিকে, তদন্তকারী শীর্ষ কর্মকর্তা পুলিশের মেজর জেনারেল পাওইন ফংসিরিন জানান, তিনি জেনারেল মানাসের জামিন আবেদন নাকচ করে দেবেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে আদালতের স্মরণাপন্ন হতে পারেন।

সূত্রের বরাত দিয়ে একটি থাই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জেনারেল মানাসের বাড়ি তল্লাশী করে আরও এক তথ্যের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ২০১৩ সালের মার্চে ও ২০১৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে অন্য দুই সেনা কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক কোটি ৪ লাখ বাথ (প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার) ট্রান্সফারে তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে জেনারেল মানাস বলেছেন, এগুলো একটি বুল-ফাইট বাজির অর্থ। তবে যে দুই সেনা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে অর্থগুলো ট্রান্সফার করা হয়েছে, তাদের কেউই মানবপাচার বা বুল-ফাইট জুয়ায় জড়িত ছিলেন বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জেনারেল আয়েক অংসানন্ট জানান, মানবপাচারে যে ৮৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫০ জন আটক অথবা আত্মসমর্পণ করেছে।

চলতি বছর মে মাসে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী দুই দেশের এলাকায় অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে মানবপাচারের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করে। পরবর্তীতে আন্দামান সাগরে ভাসমান কয়েক হাজার নাগরিকের সন্ধান পায় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও মায়ানমার কর্তৃপক্ষ।

এরই প্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে মানবপাচার রোধে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গত ২৯ মে আঞ্চলিক সম্মেলনের ডাক দেয় ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫/ আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।