ঢাকা: বহুদিন থেকেই অভিযোগ রয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পেছনে অর্থ ঢেলে ভারতবিরোধী তৎপরতা চালায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টিলিজেন্স (আইএসআই)। তবে এবার বলা হচ্ছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি-বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পেছনে অর্থ ঢালছে! আর এ বিস্ফোরক তথ্য দিলেন খোদ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) সাবেক প্রধান অমরজিৎ সিং দৌলতই।
তিনি বলছেন, বিগত সময় ধরে জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রধান সারির রাজনীতিকদের পেছনে অর্থ ঢেলে আসছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ অর্থ ঢালা হয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন) ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) মতো শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর পেছনেও। এ অঞ্চলের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ অর্থ যোগান দেওয়া হয়েছে।
অমরজিৎ সিং দৌলত বলেন, কেউই ঘুষের ঊর্ধ্বে নয়, না জঙ্গিরা, না রাজনীতিকরা, না বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। বিগত সময়ে এদের সবাই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে অর্থ পেয়েছে। আমরা এ কারণে তাদের পেছনে অর্থ ঢেলেছি যে, আমরা প্রমাণ করতে চাই, আইএসআই যা করতে পারে (অর্থ যোগান), আমরা তাদের চেয়ে অনেক ভালো করতে পারি, কেবল মানুষ হত্যা ছাড়া।
হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কথা বলছিলেন ‘র’ এর একসময়ের প্রভাবশালী এ প্রধান। ১৯৮৮ সালে গোয়েন্দা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরে দায়িত্ব নেওয়া অমরজিৎ সিং দৌলত বিজেপির আগের আমলে ‘র’ এর প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ওই দায়িত্ব শেষে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদেও কাজ করেন।
কবে থেকে অর্থ ঢালা হচ্ছে জঙ্গি-বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পেছনে? দৌলত বলছিলেন, ১৯৯০ সালে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকে এই খাতে অর্থ ঢালা শুরু হয়। সে অর্থের পরিমাণ শ’ থেকে লাখ রুপি ছুঁয়েছে। অবশ্য হুরিয়াতের কিছু নেতা অর্থ নেননি।
‘র’ এর সাবেক প্রধান জানান, তিনি কেবল তার দায়িত্বকাল অর্থাৎ ২০০৪ সাল পর্যন্ত জঙ্গি-বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থ যোগান দেওয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করতে পারেন।
নিজের লেখা ‘কাশ্মীর; দ্য বাজপেয়ী ইয়ার্স’ বইটি প্রকাশের আগে দৌলত এ সাক্ষাৎকার দিলেন। মনে করা হচ্ছে বইটিতে নিজের দায়িত্বকালের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তর লিখেছেন অমরজিৎ সিং দৌলত।
দৌলত তার দায়িত্ব পালনের শেষ দিকের বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৪ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট ক্ষমতায় আসার পর আমাকে কাশ্মীর নীতির ভিলেন বানিয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে শ্রীনগরে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার প্রথম জানার বিষয় ছিল কে-কাকে-কী পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে। এটা আসলে বড় বিষয় ছিল না। টেক্কা দিতে বিশ্বের সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থাই এভাবে অর্থ ঢালে।
‘র’ এর সাবেক প্রধান দৌলত মনে করেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আলোচনা চলমান রেখে বাজপেয়ী যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন, মোদিরও উচিত হবে একই নীতি অনুসরণ করা। তাছাড়া, মোদি তার পূর্বসূরী বাজপেয়ীর নীতি অনুসরণ করবেন ভেবেই ক্ষমতা নেওয়ার পর কাশ্মীরীরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু আলোচনা বন্ধ করে দেওয়াটা হতাশাজনক।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৫
এইচএ/