ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এবার ‘ব্যপম’ ঘূর্ণিতে কাঁপছে বিজেপি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৫
এবার ‘ব্যপম’ ঘূর্ণিতে কাঁপছে বিজেপি ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ক্ষমতায় আসার পর দেড় বছরও পার হয়নি, এর মাঝেই একের পর এক ঝড়ে কেঁপে উঠছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সিংহাসন। ভারতীয় রাজনীতিতে এখন ‘লোলিতকাণ্ড’ নামের কালবৈশাখির তাণ্ডবের মধ্যেই ‘ব্যপম’ নামের ঘূর্ণিবাত হানা দিয়েছে।

আর এ ঘূর্ণিবাতে প্রথম যার নামটি উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।

একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যু ঘোলাটে করে তুলছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপক সংস্থা ‘ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডল’ (ব্যপম) এর মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় কেলেঙ্কারির ঘটনাটিকে। কখনও মেডিকেলের ছাত্রী, কখনও সাংবাদিক, আবার কখনও পুলিশ সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা শিরোনাম হচ্ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে। আর এসব মৃত্যু ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে সংশ্লিষ্ট ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের।

চলতি সপ্তাহে এরই মধ্যে তিনটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ভারতে, যার সবগুলোই ব্যপম সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রথম মৃত্যুটি হয় গত শনিবার (০৪ জুলাই), টিভি চ্যানেল সাংবাদিক অক্ষয় সিংহের। এর পরদিন রোববার (০৫ জুলাই) দিল্লির এক হোটেলে পাওয়া যায় জবলপুর মেডিক্যাল কলেজের ডিন অরুণ শর্মার মরদেহ। আর গতকাল সোমবার (০৬ জুলাই) মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার একটি ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় পুলিশের শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক (সাব-ইন্সপেক্টর) অনামিকা সিকারওয়ার মরদেহ।

ব্যপম কেলেঙ্কারির সঙ্গে এদের তিনজনের সম্পর্ক বেশ জটিল। ২০১২ সালে উজ্জয়িনীর কাছে রেললাইনের পাশে উদ্ধার হয়েছিল মেডিকেলের ছাত্রী নম্রতা ডামোরের মৃতদেহ। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে সেসময় পুলিশ দাবি করলেও পরে তার পরিবার অভিযোগ করেন, ব্যপম কেলেঙ্কারিতে জড়িত কেউ নম্রতাকে খুন করেছে। শনিবার সেই নম্রতার বাবার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক অক্ষয় সিংহ। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয় তার।

এদিকে, জবলপুর মেডিক্যাল কলেজের ডিন অরুণ শর্মা ব্যপম কেলেঙ্কারিতে ভুয়া পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে তদন্ত করছিলেন। আর অনামিকা সিকারওয়া কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত না হলেও তার চাকরিটা হয়েছিল ব্যপম পরীক্ষার মাধ্যমেই। এভাবেই গত চার বছরে ব্যপম সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে সরকারি হিসাবে ২৪ জনের নাম। তবে বেসকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৪৬ জন।

মূল নাটেকের শুরুটা ঘটিয়েছিলেন আশিষ চতুর্বেদী ও আনন্দ রায়। গোয়ালিয়রের অধিবাসী ২৬ বছর বয়সী আশিষ সমাজকল্যাণের ছাত্র। আর ইনদওরের চিকিৎসক আনন্দ রায়।

মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আশিষ দেখেন, রাজ্যের অনেক চিকিৎসকেরই সাধারণ প্রশিক্ষণটাও নেই। ঘটনা জানতে নিজেই তদন্ত শুরু করেন। সহায়তা নেন তথ্য অধিকার আইনের। আর এতেই বেরিয়ে পড়ে মূল ঘটনা। আশিষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষায় দূর্নীতি নিয়ে মামলা করে রাজ্যপুলিশ। আর এসময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহায়তা দিয়েছিলেন আনন্দ রায়। এরপরই তা ঝড় তুলতে শুরু করে ভারতের রাজনীতিতে।

ব্যপম কেলেঙ্কারিকে ঘিরে তদন্ত যতো সামনে বাড়তে থাকে, ততোই এতে উচ্চারিত হতে থাকে বিভিন্ন রথী-মহারথীর নাম। একটা পর্যায়ে সামনে চলে আসে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নাম। আর এতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন সরকারের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা। একপক্ষ শিবরাজের পক্ষে সরাসরি কথা বললে, অপরপক্ষ দলের গা বাঁচাতে নিরপেক্ষতার কথা বলে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন শিবরাজকেই।

সোমবার (০৬ জুলাই) মধ্যপ্রদেশ সফরে গিয়ে শিবরাজের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, সিবিআই তদন্তে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বিরোধী পক্ষ এর আগে যতবার হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে তদন্তের দাবি জানিয়েছে, ততোবারই আবেদন খারিজ হয়েছে। এর পর কী করে রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তের দাবি করতে পারে?

এর আগে রোববার (০৫ জুলাই) কংগ্রেসসহ সব বিরোধী পক্ষের মুখ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, ব্যপম কেলেঙ্কারিতে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।

দুই কেন্দ্রীয় নেতার এমন বিপরীতমুখী মন্তব্য যেন দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বের অকাট্য প্রমাণ হয়ে রইলো। এদিকে, দলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেনাপতি বলে পরিচিত অরুণ জেটলির মন্তব্যে বেশ চটেছেন শিবরাজ সমর্থকরা। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মধ্যপ্রদেশের এই মুখ্যমন্ত্রীর এক ঘণিষ্ঠ ব্যক্তি বলেছেন, ব্যপম কেলেঙ্কারি আসলে উপলক্ষ মাত্র। এই সুযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাই করার পায়তারা করছে দলেরই একটি অংশ।

শিবরাজ ঘণিষ্ঠদের বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশের মুখমন্ত্রী শুরু থেকেই মোদির বিরোধী বলে পরিচিত। লোকসভা নির্বাচনের আগে যখন মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার কথা চলছিল, লালকৃষ্ণ আদভানি, সুষমা স্বরাজের মতো মোদি-বিরোধীরা তখন শিবরাজের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

শিবরাজ ঘণিষ্ঠদের প্রশ্ন, ব্যপম কেলেঙ্কারিতে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তোলার ব্যাপারে অরুণের এই চেষ্টা কি তবে তাকে বিপদে ফেলার জন্যই?

এদিকে, ললিতকাণ্ডে যেমন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, একইভাবে ব্যপম কেলেঙ্কারিতেও তারা অনেকটাই নিরব। তবে কংগ্রেসসহ বিরোধী পক্ষরা যেভাবে সরব, তাতে একের পর এক ঘূর্ণিতে কতোদিন এভাবে নিরবতায় কাটবে, তাই এখন দেখার বিষয় বলে মত রাজনীতি বিশ্লেষকদের।

** ললিতকাণ্ডে এবার বুঝি আর রক্ষা নেই সুষমার!
** তিন নারীতে গলদঘর্ম মোদি

** ললিত কাণ্ডে বলি হচ্ছেন বসুন্ধরা রাজে
** ললিত কাণ্ডে বেকায়দায় বিজেপি

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।