ঢাকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যার প্রসঙ্গ উঠলে এক বাক্যে সবার মুখে চলে আসবে সেব্রেনিৎসা গণহত্যার কথা। আধুনিক ইউরোপের কলঙ্ক বলে পরিচিত এই গণহত্যা।
বসনিয়া যুদ্ধ চলাকালে ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত দেশটির সেব্রেনিৎসা শহরে যে হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়, তা-ই ইতিহাসে সেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। সেবছর এই তিন দিনে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা করা হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল পুরুষ ও কিশোর। ১৯৯৫ সালের পর একে একে পার হয়ে গেছে ২০টি বছর। এখনও এ হত্যাকাণ্ডে নিহত হতভাগ্যদের দেহাবশেষের সন্ধান মেলে ওই এলাকায়। এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ৭৬টি স্থানে অন্তত দেড়শ গণকবরের সন্ধান মিলেছে।
সেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ডের ২০তম বাষির্কীতে এ গণহত্যায় নিহত হতভাগ্যদের স্মরণের উদ্যোগ নিয়েছে বসনিয়া ও হার্জেগোভেনিয়ার সরকার। সেই সঙ্গে নতুন সন্ধান পাওয়া নিহতদের দেহাবশেষ সমাধিস্থ করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে ১১ জুলাই দেশটিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতাদের সমাগম হবে।
১১ জুলাই সেব্রেনিৎসা-পোটোকারি মেমোরিয়াল সেন্টারে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে উপস্থিত হবেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইট, তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেত দেভাতগলু, ব্রিটিশ রাজকন্যা অ্যান ও জর্দানের রানী নূর।
সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ভুসিচও নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে উপস্থিত থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। গত মাসে যুদ্ধ চলাকালীন সেব্রেনিৎসায় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সেনা কমান্ডার নাসের ওরিচকে সার্বিয়ার অনুরোধে সুইজারল্যান্ডে আটক করা হয়। পরে তাকে বসনিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় এই দুই দেশের মধ্যে চলছে কূটনৈতিক উত্তেজনা।
১৯৯৫ সালের জুলাইতে সেব্রেনিৎসার অধিবাসীদের অনেকে বাঁচার তাগিদে ও আশ্রয়ের আশায় একশ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটে বসনিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুজলিনে পাড়ি জমায়। এই পদযাত্রা ইতিহাসে ‘মৃত্যুর দিকে পদযাত্রা’ বলে পরিচিত। সেব্রেনিৎসাবাসীদের এ পদযাত্রাকে স্মরণ করতে ‘শান্তির জন্য পদযাত্রা’র আয়োজন করেছে একদল শান্তিকামী মানুষ। এতে যোগ দিতে এরই মধ্যে বসনিয়ায় হাজির হয়েছে অন্তত ১২ হাজার অংশগ্রহণকারী।
তবে এবারের পদযাত্রা হবে উল্টো পথে। তুজলিন থেকে পোটোকারিতে পৌঁছাবেন তারা শান্তির জয়গান গেয়ে। আর এতে নেতৃত্ব দেবেন মিরসাদ সিনানোভিচ। এই মিরসাদ সিনানোভিচই ২০ বছর আগে ‘মৃত্যুর দিকে পদযাত্রা’য় সেব্রেনিৎসাবাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
২০ বছর আগের সেই সময়টাকে স্মরণ করতে গিয়ে সিনানোভিচ বলেন, সেসময় জীবনের শঙ্কা আর হাঁটার কষ্টকে ছাপিয়ে সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হয়ে উঠেছিল বাঁচার তাগিদে অসহায় মানুষের কান্না।
২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ডে নিহত ৬ হাজার ১৬৬ জনের দেহাবশেষ সমাধিস্থ করা হয়েছে। এ বছর গণহত্যা দিবসে সমাধিস্থ করা হবে আরও প্রায় সাড়ে চারশ’ জনকে। তবে পরিচয় সনাক্ত হওয়া অপর ১৩৪ জনকে এখনই সমাধিস্থ করা হবে না। তাদের পরিবারের দাবি, নিহতদের দেহের আরও অংশের সন্ধান মিললেই তবে সমাধিস্থ করা হবে।
এদিকে, এখন পর্যন্ত ৭ হাজার একশ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় সনাক্ত করা হয়েছে। সন্ধান চলছে নিখোঁজ আরও ১২০০ জনের।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
আরএইচ